ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে খালি হবে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সর্তক করল ICICI ব্যাঙ্ক

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল বা অনলাইন ব্যাঙ্কিংয়ের দৌলতে যাবতীয় আর্থিক লেনদেনের খসড়া আমাদের হাতের মুঠোয় এসে গেছে। শুধু তাই নয়, এই নয়া প্রযুক্তির কৃপায় বাড়ি বসেই ব্যাঙ্কে নতুন অ্যাকাউন্ট খেলার পাশাপাশি ইএমআই প্রদান, এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর কিংবা বিল পরিশোধ সবকিছুই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব। এক কথায় বললে, ভারতে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা এখন আগের তুলনায় অনেক গুন বেশি ‘ইউজার ফ্রেন্ডলি’ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিটি বিষয়েরই কিছু ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক আছে। অনলাইন ব্যাঙ্কিং আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যে রাখলেও, জালিয়াতদের কাছে অর্থ চুরির নিত্যনতুন রাস্তা খুলে দিচ্ছে। যেমন, আজকাল প্রতারকেরা ব্যাপক ভাবে ফিশিং অ্যাটাক করছে। সাথে ইমেল, স্প্যাম কল, সোশ্যাল মিডিয়া, ম্যালিশিয়াস লিঙ্ক ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে নানাভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। আর তাই সম্প্রতি ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপকে কাজে লাগিয়ে প্রতারকেরা যে লোক ঠকানোর ব্যবসা ফেঁদে বসেছে, তাতে ইতি টানতে ICICI ব্যাঙ্ক তাদের প্রত্যেক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করলো। একই সাথে কি ভাবে ডিজিটাল প্রতারণার হাত থেকে সুরক্ষিত থাকা যায় তার পথও বাতলেছে ব্যাঙ্কটি।

ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে চলমান জালিয়াতির বিষয়ে সতর্ক করলো ICICI ব্যাঙ্ক

ভারত ভিত্তিক প্রত্যেকটি সরকারি তথা বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি তাদের ক্লায়েন্টদের সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রায়শই নানাবিধ সতর্কতামূলক নোটিস রিলিজ করে থাকে। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও দিনকে দিন ব্যাঙ্ক জালিয়াতির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমত পরিস্থিতিতে, ICICI ব্যাঙ্ক নিজ গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে একটি টুইট করে সম্ভাব্য জালিয়াতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। টুইটে বলা হয়েছে – “ফোনে আপনার UPI পিন শেয়ার করার জন্য আপনাকে প্রলুব্ধকরা প্রতারকদের থেকে সাবধান থাকুন। নিরাপদে থাকুন, #SafeBanking অনুশীলন করুন।” পাশাপাশি, ICICI ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ একটি ইমেলও শেয়ার করেছে। যেখানে গ্রাহকদের একটি নতুন ধরনের জালিয়াতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। যার ফাঁদে ইতিমধ্যেই বহু সাধারণ মানুষ পা দিয়ে ফেলেছে এবং ফলস্বরূপ ভারী আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

ICICI ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ মারফত একটি আশ্চর্যজনক জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে। সম্প্রতি শেয়ার করা একটি ইমেলে উক্ত ব্যাঙ্কের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, “এই কঠিন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একাধিক ফান্ড সংক্রান্ত অনুরোধ পেয়েছি। আর এই অনুরোধ যদি পরিচিত কারোর কাছ থেকে আসে, তবে অবিশ্বাসের কোনো প্রশ্নই থাকে না।” ব্যাঙ্কের এরূপ মন্তব্যের মূল অর্থটা এবার একটু খুলে বলি। আসলে করোনাকালীন সময় থেকেই কিছু স্ক্যামার-গোষ্ঠী অন্যান্য মানুষের হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে, সেখান থেকে তাদের পরিচিতদের কাছে অর্থ সাহায্যে চেয়ে মেসেজ পাঠাচ্ছে। আর যেহেতু অনুরোধটি একটি পরিচিত উত্স থেকে এসেছে, সেহেতু সাত-পাঁচ না ভেবেই অনেকে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন প্রিয়জনের নামধারী স্ক্যামারের কাছে৷ “এই ধরনের পরিস্থিতিতে, সতর্ক থাকুন এবং সর্বদা বিপরীতে থাকা ব্যক্তির পরিচিতি নিশ্চিত করুন। আর যদি আপনার হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কোনওভাবে হ্যাক হয়ে থাকে, তবে দয়া করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন” গ্রাহকদের এমন সতর্কতাবার্তাই শুনিয়েছে ICICI।

প্রসঙ্গত, অপর একটি ব্লগে, নিরাপদ থেকেও কিভাবে মোবাইল ব্যাঙ্কিং বা ইন্টারনেট করা সম্ভব তার কিছু টিপস -ও শেয়ার করেছে ICICI ব্যাঙ্ক৷ এই টিপস ও কৌশলগুলি নিম্নরূপ :

নিরাপদ ও সুরক্ষিত মোবাইল ব্যাঙ্কিং করার টিপস ও কৌশল :

১. অপরিচিত কোনো নম্বর থেকে URL যুক্ত কোনও ম্যাসেজ এলে, তা এড়িয়ে যান।

২. পরিচিত হোক বা অপরিচিত কোনো ব্যক্তি কখনো যদি আপনার মোবাইল ব্যবহার করতে চায়, তাহলে ব্রাউজিং হিস্ট্রি, ক্যাশে, টেম্পোরারি ফাইল, গুগল প্লে স্টোর সহ অন্যান্য যাবতীয় অ্যাপ ক্লিয়ার করে তবেই মোবাইল অন্য কারোর হাতে দিন।

৩. অ্যাপল প্লে স্টোর (Apple App Store), গুগল প্লে স্টোর (Google Play Store) সহ অন্যান্য অফিসিয়াল অ্যাপ ডাউনলোডিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেই শুধুমাত্র অ্যাপ ইনস্টল করুন মোবাইলে।

৪. ই-মেল বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে কখনোই ব্যক্তিগত তথ্য বা অনলাইন ব্যাঙ্কিং বিশদ শেয়ার করবেন না। কারণ এমনটা করলে হ্যাকাররা এইসকল তথ্যাদি হস্তগত করার মাধ্যমে আপনার ‘আইডেন্টিটি’ চুরি করে বেআইনি কাজকর্ম সম্পাদন করতে পারে।

৫. অনলাইনে টাকার লেনদেন সম্পূর্ণ করার সাথে সাথেই মোবাইল ব্যাঙ্কিং অ্যাপ্লিকেশন থেকে লগ আউট করুন৷ সাথে, অ্যাপ উইন্ডো বন্ধ করেছেন কিনা তাও নিশ্চিত করুন। এছাড়া, সর্বদা ভেবেচিন্তে অ্যাপ পারমিশনগুলি অনুমোদন করবেন। আপনারা চাইলে মোবাইল ব্যাঙ্কিং অ্যাপকে সিকিউরিটি পিন বা পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে লক করে রাখতে পারেন।

৬. রাস্তাঘাট বা শপিং মলের অনিরাপদ ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।

৭. এতকিছু সতর্কতা অবলম্বন সত্ত্বেও যদি আপনি কোনো ধরনের ব্যাঙ্কিং জালিয়াতির সম্মুখীন হন, তবে অবিলম্বে এই বিষয়ে ব্যাঙ্কে রিপোর্ট করুন।