সাবধান! আপনার ইন্টারনেট কানেকশন ব্যান্ডউইথ বিক্রি করছে হ‌্যাকাররা, জেনে নিন কীভাবে আটকাবেন

হ্যাকারদের সৃষ্ট নিত্যনতুন ফন্দিফিকিরের সুবাদে সাইবার ক্রাইম দিনকে দিন বাড়ছে। তবে এতদিন হ্যাকারদের মূল লক্ষ্য ছিল ব্যাংক থেকে সরাসরি অর্থ চুরি করা। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আপনার ইন্টারনেট কানেকশন ব্যান্ডউইথ-ও হ্যাকারদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এবং তারা এটিকে বিক্রি করে আপনার প্রভূত আর্থিক ক্ষতিসাধন করতে পারে। অর্থাৎ খুব সোজা ভাষায় বললে, আপনার বড়ো অঙ্কের টাকা লোকসান হতে পারে। হ্যাকাররা এতদিন বিভিন্ন কারণে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত ডিভাইসগুলিকে টার্গেট করতো, যার মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ (বা ব্যক্তিগত) তথ্য চুরি করা, র‌্যানসামের জন্য ডেটা এনক্রিপ্ট করা, ডেটা এবং আইডেন্টিটি চুরি করা, স্থানীয়ভাবে সঞ্চিত ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করা সহ আরও অনেক কিছু। তবে এছাড়াও হ্যাকাররা প্রক্সিওয়্যার (proxyware) ব্যবহার করে ইউজারদের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি Cisco Talos হ্যাকারদের এই নতুন কারসাজির ঘটনাটি আবিষ্কার করে। ‘proxyware’ নামে পরিচিত এই টেকনোলজিটি হ্যাকারদের দ্বারা অপব্যবহৃত হচ্ছে, এবং যাদের ডিভাইসগুলি ম্যালওয়্যার দ্বারা সংক্রামিত হয়েছে তাদের লক্ষ্য করে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রক্সিওয়্যার নিজে অবৈধ নয়, এবং ZDNet-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, কিছু সিকিউরিটি এবং ফায়ারওয়াল প্রোগ্রাম সহ বিভিন্ন বৈধ উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহৃত হয়; কিন্তু সম্প্রতি অবৈধ পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জনের জন্য এটি হ্যাকারদের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে।

দুর্ভাগ্যবশত, হ্যাকাররা এই প্রক্সিওয়্যার টুলগুলিকে ইউজারের অজান্তেই তাদের ডিভাইসগুলিতে ইনস্টল করছে বলে জানা গেছে। আর হ্যাকাররা যদি দিনের পর দিন ধরে বহু সংখ্যক ইউজারের ডিভাইসে এই ধরনের কাজ করে থাকে তাহলে তাদের অ্যাকাউন্টে তো অর্থের বন্যা বয়ে যাবেই, অপরদিকে নিরীহ সাধারণ ব্যবহারকারীরা বুঝতেই পারবেন না তাদের কষ্টার্জিত অর্থ কীভাবে অবলীলায় খোয়া চলে যাচ্ছে! শুধু তাই নয়, যেহেতু বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ডিভাইসে এই অ্যাপগুলির উপস্থিতি সম্পর্কেই অবগত নন, তাই তারা তাদের ইন্টারনেট কানেকশন ব্যান্ডউইথের কোনো অপব্যবহার সম্পর্কেও জানতে পারেন না।

কীভাবে আপনি আপনার ইন্টারনেট কানেকশন ব্যান্ডউইথ বিক্রি হওয়া আটকাতে পারেন

এই ধরনের জালিয়াতির হাত থেকে নিরাপদে থাকার জন্য ব্যবহারকারীদের অবশ্যই নীচে উল্লিখিত এই ছয়টি জিনিস করতে হবে:

১. সর্বদা আপনার গ্যাজেটে বিদ্যমান সবকটি অ্যাপ চেক করুন। চেক করতে গিয়ে আপনার চোখে যদি এমন কোনো অ্যাপ পড়ে যেটি কবে ও কেন ডাউনলোড করা হয়েছে সে সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নেই, তাহলে অবিলম্বে সেগুলি ডিলিট করুন। এমনকি যদি কোনো ভ্যালিড অ্যাপও আপনি বিগত কয়েক মাসে ব্যবহার না করে থাকেন, তাহলে সেগুলিও ডিলিট করে ফেলাই শ্রেয়।

২. যে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার জন্য সবসময় Google Play Store এবং Apple App Store-এর মতো অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করুন। তবে এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে, এই দুটি স্টোরেও এমন অনেক অ্যাপ রয়েছে যাদের মধ্যে ক্ষতিকারক ম্যালওয়ার লুকিয়ে আছে। যদিও উভয় স্টোরই সন্ধান পাওয়া মাত্রই অ্যাপগুলিকে ডিলিট করে, কিন্তু কিছুদিন পরে আবার সেগুলি অন্যরূপে স্টোরে ফিরে আসে।

৩. বিল্ট-ইন সিকিউরিটি স্ক্যানার অ্যাক্টিভ এবং এনাবেল আছে কি না তা নিশ্চিত করুন, কারণ এটি নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি এবং সংক্রামক ভাইরাসের সন্ধানে নিয়মিত কম্পিউটার স্ক্যান করে।

৪. অজানা সোর্স থেকে আসা কোনো লিঙ্ক অবিলম্বে ডিলিট করে ফেলুন, পাশাপাশি পরিচিত সোর্স থেকে আসা লিঙ্কে ক্লিক করার আগেও যথাযথ চিন্তাভাবনা করে নিন।

৫. একটি সমস্যাযুক্ত অ্যাপ্লিকেশন সনাক্ত করার পর, ব্যবহারকারীদের একটি ইনফেকশন ক্লিনার সার্ভিস রান করানো উচিত যা Windows বুট হওয়ার আগে PC ক্লিন করতে পারে। এর ফলে আপনার সিস্টেম থেকে ম্যালওয়্যার রিমুভ করা খুব সহজেই সম্ভব হবে।

৬. অনলাইনে পাইরেটেড অ্যাপ এবং গেমস থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন