বর্ষায় খারাপ হওয়ার ঝুঁকি, ইলেকট্রিক স্কুটার বা বাইক নিয়ে বেরোনোর আগে মাথায় রাখুন এই 5 বিষয়

ভারতবর্ষের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বছরের বেশিরভাগ সময় গরমের দাপট অব্যাহত থাকলেও জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে প্রায় সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল স্বমহিমায় বিরাজ করে। ইতিমধ্যেই মৌসুমী অক্ষরেখার প্রভাবে উত্তর থেকে দক্ষিণ ভারত সর্বত্রই প্রবল বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তা। বেশ কিছু রাজ্য ইতিমধ্যেই বানভাসি হয়েছে। বৃষ্টির দিনগুলিতে যে কোনো গাড়ি বিশেষত বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

আসলে যে কোনো ধরনের ইলেকট্রিক গাড়ির মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম জলীয় বাষ্প কিংবা বৃষ্টির সংস্পর্শে এসে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাটারি চালিত চার চাকার ক্ষেত্রে সমস্যা কিছুটা কম হলেও বর্ষাকালে ইলেকট্রিক টু-হুইলার নিয়ে সত্যিই চিন্তা ভাবনা করার প্রয়োজন রয়েছে। ওয়াটারপ্রুফ আইপি(IP) সার্টিফিকেট থাকলেও সাবধানতার মার নেই একথা মানতেই হবে আমাদের। এই বিষয়ে চিন্তামুক্তি ঘটাতে বর্ষার সময় ইলেকট্রিক বাইক কিংবা স্কুটারকে কী ধরনের যত্ন করবেন তার গাইডলাইন রইল আজকের প্রতিবেদনে।

বর্ষাকালে ইলেকট্রিক বাইক ও স্কুটারের যত্ন-

সুরক্ষিত পার্কিং স্পট

এই সময় একটি সুরক্ষিত স্থানে আপনার ব্যাটারি চালিত দুই চাকার বাহনকে পার্ক করা অতি প্রয়োজন। সম্ভব হলে কোনো ছায়াযুক্ত অংশে পার্ক করতে পারলে ভালো। নয়তো আপনার সাথে সবসময় এই বাইক কিংবা স্কুটারকে ঢেকে রাখার জন্য বিশেষ কভার রাখার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। দীর্ঘ সময় ধরে প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্যে ফেলে রাখলে জলীয় অংশের দাপটে চিরস্থায়ী ক্ষতির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে মরচে ধরার সম্ভাবনা থাকে। সত্যি কথা বলতে পেট্রল চালিত টু-হুইলারের তুলনায় বৈদ্যুতিক দু’চাকার মধ্যে অনেক ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই কারণেই এই সতর্কতা প্রয়োজন। কোনো ইলেকট্রিক খুঁটি অথবা গাছের পাশে এই ধরনের স্কুটার পার্ক করা অনুচিত। এছাড়াও দীর্ঘ সময় পার্ক করতে হলে অবশ্যই ডবল স্ট্যান্ড ব্যবহার করুন।

চার্জিং এর যন্ত্রপাতি সুরক্ষিত রাখা

অতিরিক্ত বৃষ্টির এই দিনগুলিতে ইলেকট্রিক স্কুটার ব্যবহারকারীদের অন্য আরো একটি যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হল চার্জিং ডিভাইস। চার্জ করার এই যন্ত্রটি যতটা সম্ভব শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে আপনাকে। নচেৎ এর ভিতরের অংশে জল প্রবেশ করে শর্ট সার্কিট ঘটাতে পারে। এর ফলে ই- স্কুটার কিংবা বাইকের ব্যাটারির নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়াও এমন সময় পাবলিক চার্জিং ডিভাইস ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষা

গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীত যেকোনো সময়ই আপনার দুই চাকার বাহনটির ব্যাটারি নিয়মিত চার্জ করা আবশ্যক। মনে রাখবেন এটি কিন্তু আপনার গাড়ির প্রাণভ্রোমরা। অনেক সময় বাতাসের আর্দ্রতা জনিত কারণে ব্যাটারির দুটো টার্মিনালে সালফার জাতীয় পদার্থ জমতে দেখা যায়। তখন ব্যাটারির চার্জ গ্রহণ কিংবা বর্জন কোনো কাজই সঠিকভাবে সম্ভবপর হয় না। এমন পরিস্থিতি হলে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ না করে অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সাধারণত নামী সংস্থার স্কুটারের মধ্যে থাকা ব্যাটারিতে আইপি রেটিং দেওয়া থাকে যা আদতে একটি সুরক্ষা কবচ।

জলমগ্ন রাস্তা এড়িয়ে চলা

আজকালকার দিনের অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক বাইক ও স্কুটার অল্প জলমগ্ন রাস্তা দিয়ে সাবলীলভাবেই চলাফেরা করতে পারে। তবে নির্দিষ্ট উচ্চতার বেশি জল রয়েছে এমন রাস্তায় এই ধরনের যানবাহন না চালানোই শ্রেয়। ইলেকট্রিক স্কুটারগুলির নিচের দিকের অংশে নানাবিধ ইলেকট্রনিক্স সেন্সর ব্যবহার করা হয়। এগুলি জলের সংস্পর্শে এলে যেমন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তেমনভাবেই পরিবর্তন করার খরচও মাত্রাতিরিক্ত। বৃষ্টিতে ভেজার পর ইলেকট্রিক টু-হুইলার এর সর্বত্রই শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলা উচিত।

ইন্সুরেন্স এর ব্যবস্থা

আমাদের দেশে বেশিরভাগ যানবাহনের ক্ষেত্রেই বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এদেশের প্রথম সারির মোটর ইন্সুরেন্স প্রদানকারী সংস্থাগুলি তাদের সাধারণ প্যাকেজের মধ্যে বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির জন্য কভারেজ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে থাকে। এই ধরনের কভারেজ পেতে হলে গ্রাহকদেরকে বাড়তি টাকা গুনতে হয়। তবে আমাদের পরামর্শ হলো ভারতের মতো বন্যাপ্রবণ দেশে সাধারণ ইন্স্যুরেন্স কভারেজের সাথে বাড়তি অর্থ দিয়ে এই বিশেষ ইন্সুরেন্স করে নেওয়া ভালো।