শাওমি, রিয়েলমিদের হাত ধরেই বিশ্বের দ্বিতীয় স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক দেশ হয়ে উঠেছে ভারত

বর্তমানে সারা ভারতে চীনের দ্রব্য বয়কট করার স্লোগান চলছে। ভারতে দু’বছর আগে স্মার্টফোন তৈরীর সেক্টরে একটি বিপ্লব এসেছিল, যার হাত ধরে ভারতে বর্তমানে স্মার্টফোন তৈরির ফ্যাক্টরীর সংখ্যা ২৫৮। দু’বছর আগে এই সংখ্যাটিই ছিল মাত্র ২। এই এতগুলি ফ্যাক্টরি তৈরি হওয়ার ফলে ভারতে প্রচুর চাকরির সুযোগ তৈরি হয়। তবে বর্তমানে, চীনের দ্রব্য বয়কট করার স্লোগান চারিদিকে চলতে থাকায় ভারতের এই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ তৈরি করার স্বপ্ন কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এবং যদি পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায় তাহলে হয়তো এই স্বপ্ন পূরণ করা বেশ কিছুটা সমস্যাজনক হয়ে পড়বে ভারতের ক্ষেত্রে।

ভারতের যে কয়টি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রয়েছে অর্থাৎ- মাইক্রোম্যাক্স, ইন্টেক্স, লাভা এবং কার্বন, একত্রে MILK বর্তমানে খুবই সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। একটি রিসার্চে জানা গিয়েছে, ভারতের সম্পূর্ণ মার্কেটশেয়ারের মধ্যে গত ২০১৯ সালে মাইক্রোম্যাক্সের মার্কেট শেয়ার ছিল ১.১ শতাংশ, ইন্টেক্সের মার্কেট শেয়ার ০.১ শতাংশ, লাভার ১.২ শতাংশ এবং কার্বনের ০.২ শতাংশ যা অত্যন্ত কম।

আরো একটি রিপোর্ট অনুযায়ী চীনের স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলি ২০১৯ সালে ভারতের মোট মার্কেট শেয়ারের ৭২% দখল করে নিয়েছিল যা তার আগের বছর ছিল ৬০%। এর পিছনে মূলত কাজ করেছে দুটি কোম্পানি- BBK Electronics এবং Xiaomi। বিবিকে ইলেকট্রনিক্স ভারতের অত্যন্ত জনপ্রিয় চারটি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড – অপ্পো, ভিভো, রিয়েলমি এবং ওয়ানপ্লাসের পেরেন্ট কোম্পানি। এই কোম্পানিটি ভারতের সম্পূর্ণ মার্কেটশেয়ারের ৩৭% অধিকার করে রয়েছে। অন্যদিকে শাওমি তারা আরও দুটি ব্র্যান্ড রেডমি এবং পোকোর সাথে বর্তমানে ভারতের মার্কেটশেয়ারের ২৮% দখল করেছে।

তবে শুধুমাত্র মার্কেটশেয়ার দখল করাই নয়, এই দুটি কোম্পানি ভারতে মোবাইল ডিভাইস এবং এক্সেসরিজ তৈরি করার জন্য অনেক টাকা বিনিয়োগও করেছে। শাওমির ভারতে সর্বমোট ৭টি স্মার্টফোন তৈরির প্ল্যান্ট রয়েছে এবং এই কোম্পানিটি তাইওয়ানের মাল্টিন্যাশনাল ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি ফক্সকন এবং সিঙ্গাপুরের টেকনোলজি কোম্পানি ফ্লেক্স লিমিটেডের সঙ্গে যুক্ত।

ভারতে বিক্রি হওয়া ৯৯% স্মার্টফোন এই ৭টি কারখানাতেই তৈরি হয় এবং শাওমি ২৫,০০০-রও বেশি মানুষকে কাজে নিযুক্ত করেছে( যার মধ্যে ৯৫%ই মহিলা)

এছাড়াও শাওমি ভারতে পিসিবিএ অ্যাসেম্বল করার কাজে যুক্ত। অন্ধ্রপ্রদেশে ডিক্সন টেকনোলজির সঙ্গে যুক্ত হয়ে শাওমি একটি স্মার্টটিভি তৈরি করার কারখানা স্থাপন করেছে। এই কোম্পানিটি তাদের ভারতীয় ইউনিটে গত বছর ৩,৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল।

শুধু শাওমি নয়, ভারতের অন্যান্য আরও বড় ব্র্যান্ড যেমন- রিয়েলমি এবং ভিভো, এরাও ভারতে প্রচুর চাকরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। রিয়েলমির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মাধব শেঠ জানিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যেই ৭,৫০০ জনকে চাকরি দিয়েছেন এবং এই বছরের শেষের দিকে এই সংখ্যা ১০,০০০-র গন্ডি অতিক্রম করবে। ভিভো কোম্পানিটিও ভারতে ৭,৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। এছাড়াও চীনের জনপ্রিয় কোম্পানি টিসিএল তিরুপতিতে ২,২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নিজেদের ফ্যাক্টরি তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। টিসিএলের এই ফ্যাক্টরিতে মোবাইল হ্যান্ডসেট এবং টেলিভিশন তৈরি হবে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির পরে এখন যখন ভারতের স্মার্টফোন সেক্টরটি কিছুটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, সেই সময় এরকম কোন সমস্যা দেখা দিলে তা ভারতের জন্যই ক্ষতিকর, এমনটাই মনে করছেন বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও, বর্তমানে ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে অনেক বেশি শক্তিশালী হতে হবে যদি ভালোভাবে ব্যবসা করতে হয় ভারতে। এই কাজ এক রাতের মধ্যে সম্ভব নয়।

ইনফরমেশন টেকনোলজি দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৪ সালে ভারতে মাত্র দুটি মোবাইল ফোন তৈরির কারখানা ছিল। সেখান থেকে ভারতে এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক দেশ হয়ে উঠেছে। এই সময় এই বৃদ্ধিকে রোধ করাটা খুব একটা ভাল কাজ হবে না। বরং এই সময় আমাদের সঠিক পথে এগিয়ে স্থানীয় কোম্পানিগুলিকে চাঙ্গা করে তোলার পরিকল্পনা নিতে হবে। যাতে তারা আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে কঠিন প্রতিযোগিতায় অন্যান্য কোম্পানিগুলির সাথে লড়াই করার ক্ষমতা রাখতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *