Teflon vs Ceramic Coating: গাড়ি নতুনের মতো চকচকে রাখতে কোন কোটিং আদর্শ, টেফলন নাকি সিরামিক? জেনে নিন

শোরুম থেকে নিজের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে স্বপ্নের গাড়িটি আনার অভিজ্ঞতা সত্যিই অবর্ণনীয়। এ এক অনন্য অনুভূতি। যা কোনভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। নতুন গাড়ির ভেতরের গন্ধই যেন আলাদা ধরনের। সত্যিই এক অন্য ধরনের গর্ব অনুভব হয় সেই মুহূর্তে। তবে প্রশ্ন হলো কিভাবে আপনার গাড়ির এই চাকচিক্য বছরের পর বছর ধরে রাখা সম্ভব? গাড়ির ইন্টেরিয়ার ও এক্সটেরিয়রের যত্নের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে এদেশে। গ্যাটের করি খরচা করলে তা করানো সম্ভব। তবে গাড়ির বহিরঙ্গের ব্যাপারে জনপ্রিয় দুটি ট্রিটমেন্ট হল টেফলন কোটিং ও ন্যানো সিরামিক কোটিং।

তবে এই ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথমেই যেটি করণীয় তা হল গাড়িটি সম্পূর্ণভাবে ধুয়ে ফেলা। এক্ষেত্রেও প্রধানত চার ধরনের উপায় রয়েছে। প্রথমে একদম সহজ ভাবে সবাই যা করে প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট একটি কার ওয়াশিং ক্লিনার ব্যবহার করে গাড়িটি ধুয়ে ফেলা। আর দ্বিতীয়টি হল রাস্তার ধারে থাকা সাধারণ গ্যারেজ থেকে প্রেসার ওয়াশার মেশিন দিয়ে জলযোগে পুরো গাড়িটি পরিষ্কার করা। তৃতীয় অপশনটি হল 3M বা Express Car Wash এর মত নামিদামি এক্সপার্ট এর কাছ থেকে দক্ষ হাতে সম্পূর্ণ গাড়িটি ধুয়ে ফেলা। আর শেষ অর্থাৎ চতুর্থ রাস্তা হল ওয়াটারলেস কার ওয়াশ, মানে এই কাজে জলের ব্যবহার প্রায় হয় না বললেই চলে।

গাড়ি ধোয়ার পালা তো হল। এবার সম্পূর্ণরূপে গাড়িটি শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিয়ে তার উপর নির্দিষ্ট কিছু কেমিক্যাল সলিউশন দিয়ে ভালোভাবে মোছার নামই হলো কম্পাউন্ডিং প্রসেস। এর ফলে গাড়ির বডি প্যানেলের প্রত্যেকটি অংশ পুনরায় তার চাকচিক্য ফিরে পায়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি খুবই সরল। প্রথমেই একটি কাটিং কম্পাউন্ড গাড়ির বডি প্যানেলের উপর দিয়ে সুন্দরভাবে পালিশ করার মেশিন দিয়ে তা সম্পূর্ণ অংশে ভালোভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আর এর ফলেই গাড়ির উপরের অংশের সমস্ত ধরনের দাগ পুরোপুরি চলে যায়।

এর পরবর্তী ধাপেই টেফলন কোটিং কিংবা ন্যানো সিরামিক কোটিং করার প্রয়োজন হয়। রাসায়নিক গত দিক থেকে ব্যাখ্যা করতে গেলে টেফলন মূলত সিন্থেটিক ওয়াক্সের উপর নির্মিত ফ্লুরো পলিমার জাতীয় এক তরল। রান্নাঘরে ব্যবহৃত ননস্টিক বাসনের ক্ষেত্রেও এই পদার্থটি ব্যবহার করা হয়। টেফলন কোটিং ০.২ মাইক্রন পুরু, যা গাড়ির রংয়ের উপর এক ধরনের আস্তরণ তৈরি করে বাইরের ধুলোবালি থেকে একে রক্ষা করে।

অন্য দিকে, সিরামিক কোটিং হল এক ধরনের পরিষ্কার আস্তরণ, যা সিলিকন কার্বাইড বা কার্বোরান্ডাম (সিলিকন ও কার্বন দিয়ে গঠিত যৌগ) ব্যবহার করে। যখনই এই সিরামিক কঠিন গাড়ির রঙের উপর দেওয়া হয় তখন রংয়ের সঙ্গে রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এক ধরনের পরিষ্কার আস্তরণ তৈরি করে, যা জলকণাকে শত হস্ত দূরে রাখে। এমনকি এই আস্তরণ বাইরের ধূলিকণা থেকেও গাড়ির মূল রংকে রক্ষা করে।প্রসঙ্গত কার্বোরান্ডাম প্রকৃতিতে পাওয়া অন্যতম কঠিন পদার্থ।

আমাদের দেশে টেফলন কোটিং করাতে মোটামুটি ভাবে ৪,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। যদিও গাড়ির আকার অনুযায়ী এই দাম খানিকটা বাড়া-কমা করে। আর সিরামিক কোটিং যথেষ্ট খরচা সাপেক্ষ। গাড়ির আকার ও প্যাকেজ অনুযায়ী এর খরচ ১৮,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

সিরামিক কোটিং যে যথেষ্ট খরচা সাপেক্ষ তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই ঠিকই তবে এটি যথেষ্ট দীর্ঘস্থায়ী। তার পাশাপাশি এই আস্তরণ গাড়িকে সমস্ত ধরনের স্ক্র্যাচ , ধুলোকণা, মরচে ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। এমনকি অ্যাসিড বৃষ্টির মত ক্ষতিকারক প্রাকৃতিক ঘটনার থেকেও বাঁচায় এটি। অপর হাতে টেফলন কোটিং যথেষ্ট কম দাম বলে মনে হলেও এটি অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। মোটামুটি ভাবে ছয় মাসের মধ্যেই এই কোটিং আবার করানোর প্রয়োজন হয়। এছাড়াও সিরামিক কোটিংয়ের মত প্রোটেকশন করার ক্ষমতা এর নেই। তাই যদি আপনি আপনার গাড়িটিকে দীর্ঘমেয়াদি ভাবে ভালো অবস্থায় রাখতে চান, সেক্ষেত্রে সিরামিক কোটিং করানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ।