Google ব্যান করল এই ৭টি অ্যাপ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা না করতে চাইলে ফোন থেকে ডিলিট করুন

আগে জোকার সাধারণত সার্কাসেই দেখা যেত, কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে Google Play Store-এও জোকারের (Joker) দেখা মিলছে! তবে তফাতটা হল এই যে, সার্কাসের জোকার একজন রক্তমাংসের মানুষ যার কাজ হল ছোট-বড়ো নির্বিশেষে সকল মানুষকে আনন্দ দেওয়া, আর অন্যদিকে Play Store-এর জোকার হল এক ধরণের দূষিত ম্যালিশিয়াস সফ্টওয়্যার যা ডিভাইসের এসএমএস ব্যবহার করে প্রিমিয়াম পরিষেবায় সাইন আপ করিয়ে ইউজারদের সর্বস্বান্ত করতে সিদ্ধহস্ত।

এমনিতেই গুগল প্লে স্টোরে ম্যালিশিয়াস ভাইরাসযুক্ত অ্যাপের অস্তিত্বের খবর প্রায়শই শোনা যায়, এবার সেখানে একাধিক ট্রোজানাইজড জোকার ম্যালওয়্যার (Trojanised Joker malware) দ্বারা আক্রান্ত অ্যাপের দেখা মিলেছে। সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী, গুগল এই ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত ৭টি অ্যাপ্লিকেশন প্লে স্টোর থেকে ব্যান করে দিয়েছে। Kaspersky-র নিরাপত্তা বিশ্লেষক তাতয়ানা শিশকোভা (Tatyana Shishkova) সর্বপ্রথম এই অ্যাপগুলির সন্ধান পান এবং তৎক্ষণাৎ গুগলকে এগুলির সম্পর্কে অবহিত করেন। আর ইউজারদের সুরক্ষিত রাখতে গুগল যে সদাতৎপর, একথা আমাদের সকলেরই জানা। তাই টেক জায়ান্টটি তৎক্ষণাৎ এই ৭ টি অ্যাপ প্লে স্টোর থেকে সরিয়ে ফেলে।

সম্প্রতি ব্যান হওয়া এই অ্যাপগুলি ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক ইউজার ডাউনলোড করেছেন বলে জানা গেছে। আর যারা ডাউনলোড করেছেন তারা নিজেরাও জানেন না যে এর ফলে তারা কতটা বড়োসড়ো বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছেন। তাই পাঠকদের সুবিধার্থে আমরা নীচে এই সাতটি অ্যাপের কথা উল্লেখ করলাম (প্রতিটি অ্যাপের পাশে ব্র্যাকেটে ইতিমধ্যে কত বার সেটি ডাউনলোড করা হয়েছে তা উল্লেখ করা হল)। আপনাদের ফোনে যদি এর মধ্যে কোনো অ্যাপ থেকে থাকে, তাহলে অবিলম্বে সেটিকে ডিলিট করে ফেলুন।

১. Now QRcode Scan (১০,০০০ এরও বেশি)

২. EmojiOne Keyboard (৫০,০০০ এরও বেশি)

৩. Battery Charging Animations Battery Wallpaper (১,০০০ এরও বেশি)

৪. Dazzling Keyboard (১০ বারের বেশি)

৫. Volume Booster Louder Sound Equalizer (১০০ টিরও বেশি)

৬. Super Hero-Effect (৫,০০০ এরও বেশি)

৭. Classic Emoji Keyboard (৫,০০০ এরও বেশি)

আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, ২০১৯ সালে সর্বপ্রথম জোকার ম্যালওয়্যারের সন্ধান পাওয়া যায়, যা মাঝেমধ্যেই গুগল প্লে স্টোরে হানা দেয়। এটি এক্সিকিউশন প্রসেস অথবা পেলোড রিট্রাইভিং কৌশল ব্যবহার করে গুগল প্লে-র সিকিউরিটি চেক সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে থাকে। যেহেতু ম্যালওয়্যারটি গুগল প্লে স্টোরের সিকিউরিটি সিস্টেমকেও বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে সক্ষম, তাই এর নাগাল খুব সহজে পাওয়া যায় না।

এই ম্যালওয়্যারটি প্রায় সবসময় ডেভেলপ হতে থাকে। সেক্ষেত্রে ইউজাররা এই ম্যালওয়্যারের সাথে সংযুক্ত অ্যাপ্লিকেশনগুলি ডাউনলোড করলে তাদের এসএমএস, ওটিপি, কন্ট্যাক্টস বা ডিভাইসের অন্যান্য তথ্য চুরি যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়াও আগেই বলেছি যে, এই জোকার ম্যালওয়্যার, ডিভাইসের এসএমএস ব্যবহার করে প্রিমিয়াম পরিষেবায় সাইন আপ করিয়ে ইউজারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিমেষেই খালি করে ফেলতে পারে। তাই যে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় সতর্ক থাকুন এবং এই ধরনের ম্যালওয়্যার যুক্ত অ্যাপ ডাউনলোড করা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকুন।

গুগল প্লে স্টোর থেকে ট্রোজান জোকার ম্যালওয়্যার যুক্ত অ্যাপগুলি ডাউনলোড করা কীভাবে এড়ানো যায়?

১. অজানা সোর্স থেকে কোনো অ্যাপ কখনোই ডাউনলোড করবেন না। সেইসাথে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় সেটির রিভিউ এবং কত সংখ্যক বার সেটি ডাউনলোড করা হয়েছে সেগুলির উপর নজর রাখুন। যদি রিভিউ খারাপ থাকে এবং অ্যাপটির ডাউনলোডের সংখ্যা কম হয়, তাহলে সেটি ডাউনলোড করা এড়িয়ে চলুন।

২. যে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে চাইছেন তার ডেসক্রিপশন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করুন। যদি তাতে কোনো বানান বা ব্যাকরণগত ভুল আপনার চোখে পড়ে, তাহলে খবরদার সেই অ্যাপ কখনোই ডাউনলোড করবেন না।

৩. আপনি যদি আপনার ফোনে এমন কোনো অ্যাপের সন্ধান পান যেটি আদৌ আপনি ডাউনলোড করেননি বা ফোনের ইন-বিল্ট অ্যাপও নয়, তাহলে অবিলম্বে সেটিকে ডিলিট করে ফেলুন।

৪. আপনার ফোনে যদি এমন কোনো অ্যাপ থাকে যা আপনি বিগত ৬ মাসে ব্যবহার করেননি, তবে স্প্রিং ক্লিনিং করার পর অবিলম্বে অ্যাপটিকে ডিলিট করে ফেলুন।

৫. ম্যালওয়্যার অ্যাটাক থেকে আপনার ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখতে আপনি একটি অ্যান্টি-ভাইরাস সার্ভিসও সাবস্ক্রাইব করতে পারেন। সাইবার সিকিউরিটির জন্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অ্যান্টি-ভাইরাস প্রোটেকশন অ্যাপ সার্ভিস হল Avast, Malwarebytes Premium এবং AVG।