Samsung Galaxy Z Fold 5 নাকি Apple iPhone 14 Pro Max, কোন ফোন আপনার জন্য উপযুক্ত হবে

Samsung Galaxy Z Fold 5 এবং Apple iPhone 14 Pro Max -এর মধ্যে কোনটি সর্বাধিক 'ভ্যালু ফর মানি' ফোন জেনে নিন

গত ২৬শে জুলাই অনুষ্ঠিত ‘Galaxy Unpacked’ ইভেন্ট চলাকালীন Samsung তাদের লেটেস্ট ফোল্ডেবল হ্যান্ডসেট Galaxy Z Fold 5 -এর উপর থেকে পর্দা সরায়। এটি দুর্দান্ত ফিচারের পাশাপাশি মোট পাঁচটি ক্যামেরার সঙ্গে হাজির হয়েছে। এছাড়া আলোচ্য ডিভাইসে আন্ডার-ডিসপ্লে ক্যামেরার প্রযুক্তি ব্যবহার করায়, এর ফিচার-তালিকা আরো শক্তিশালী হয়েছে। এক্ষেত্রে দুর্দান্ত ক্যামেরা বিভাগের কথা যখন উঠলোই তখন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আত্মপ্রকাশ করা iPhone 14 Pro Max মডেলকে ভুললে চলবে কি করে! ভাবছেন একটি ফোল্ড-স্টাইল স্মার্টফোনের সাথে ফ্লাট ডিসপ্লে ডিজাইন হ্যান্ডসেটের তুলনা কেন করছি? আসলে লঞ্চ পরবর্তী সময়ে উক্ত Apple মডেলটি নিজের ক্যামেরা পারফরম্যান্সের জন্য যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে। তাই উল্লেখিত দুটি ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসের ডিজাইন ভিন্ন হলেও, ফিচারের দিক থেকে একে অপরকে কড়া টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই আজ আমরা Samsung Galaxy Z Fold 5 এবং Apple iPhone 14 Pro Max -এর মধ্যে কোনটি সর্বাধিক ‘ভ্যালু ফর মানি’ ফোন তা বিচার করবো।

Samsung Galaxy Z Fold 5 vs Apple iPhone 14 Pro Max : ডিসপ্লে ও সেন্সর

ডুয়েল-সিমের (ন্যানো + ই-সিম) স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৫ স্মার্টফোনে রয়েছে ৭.৬-ইঞ্চির QXGA+ (২,১৭৬ x ১,৮১২ পিক্সেল) ডায়নামিক AMOLED 2X ইনফিনিটি ফ্লেক্স ডিসপ্লে। এই ডিসপ্লে – ১২০ হার্টজ পর্যন্ত অ্যাডাপ্টিভ রিফ্রেশ রেট, ৩৭৪ পিপিআই পিক্সেল ডেনসিটি এবং ১২.৬:১৮ এসপেক্ট রেশিও সাপোর্ট করে। এই ডিভাইসে ৬.২-ইঞ্চির ফুল এইচডি প্লাস (২,৩১৭ x ৯০৪ পিক্সেল) ডায়নামিক AMOLED 2X কভার ডিসপ্লেও পাওয়া যাবে, যা ৪৮ হার্টজ এবং ১২০ হার্টজের মধ্যে অ্যাডাপ্টিভ রিফ্রেশ রেট এবং ৪১২ পিপিআই পিক্সেল ডেনসিটি অফার করে। নিরাপত্তার জন্য এতে সাইড-মাউন্টেড ক্যাপাসিটিভ ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর বিদ্যমান।

সার্জিক্যাল গ্রেড স্টেইনলেস স্টিলের সাথে আসা আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্সে ৬.৭-ইঞ্চির সুপার রেটিনা XDR OLED ডায়নামিক আইল্যান্ড নচ ডিসপ্লে দেখা যাবে। এই ডিসপ্লে অ্যাপলের প্রোমোশান ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট এবং ২০০০ নিট পিক ব্রাইটনেস সাপোর্ট করে। সিকিউরিটি ফিচার হিসাবে এতে ফেস আইডি উপলব্ধ।

Samsung Galaxy Z Fold 5 vs Apple iPhone 14 Pro Max : প্রসেসর, অপারেটিং সিস্টেম, র‍্যাম, স্টোরেজ

মাল্টিটাস্কিং ও ফাস্ট পারফরম্যান্সের জন্য Samsung Galaxy Z Fold 5 স্মার্টফোনে গ্যালাক্সি-এক্সক্লুসিভ কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ২ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। এটিকে ১২ জিবি র‍্যাম এবং ১ টিবি পর্যন্ত স্টোরেজের সাথে পাওয়া যাবে। ফোনটি অ্যান্ড্রয়েড ১৩ ভিত্তিক স্যামসাংয়ের লেটেস্ট ওয়ান ইউআই ৫.১.১ (One UI 5.1.1) কাস্টম ইউজার ইন্টারফেস দ্বারা চালিত। এক্ষেত্রে সংস্থার তরফ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, আলোচ্য ফ্ল্যাগশিপ মডেলের সাথে মোট চারটি ওএস আপগ্রেড এবং পাঁচ বছরের জন্য সিকিউরিটি প্যাক আপডেট অফার করা হবে।

অভ্যন্তরীণ স্পেসিফিকেশনের কথা বললে, Apple iPhone 14 Pro Max মডেলে সংস্থার লেটেস্ট তথা সর্বাধিক শক্তিশালী এ১৬ বায়োনিক (A16 Bionic) চিপসেট আছে, যাতে ২টি হাই পারফরম্যান্স কোর ও ৪টি হাই এফিসিয়েন্সি কোর উপলব্ধ। অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে এতে আইওএস ১৬ (iOS 16) পাওয়া যাবে। যদিও সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে ডিভাইসটি আইওএস ১৬.৩ (iOS 16.3) ওএস ভার্সন পর্যন্ত আপগ্রেডযোগ্য। আর এতে ১ টেরাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ মিলবে।

Samsung Galaxy Z Fold 5 vs Apple iPhone 14 Pro Max : ক্যামেরা সেটআপ

ছবি তোলার জন্য স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৫ ফ্ল্যাগশিপ ফোনের রিয়ার প্যানেলে ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ বিদ্যমান। এই ক্যামেরাগুলি হল – ডুয়েল পিক্সেল অটোফোকাস, অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (OIS) ও এফ/১.৮ অ্যাপারচার সহ ৫০ মেগাপিক্সেলের ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল প্রাইমারি সেন্সর, এফ/২.২ অ্যাপারচার সহ ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা-ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্স এবং ফেজ ডিটেকশন অটোফোকাস, অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (OIS), ও এফ/২.৪ অ্যাপারচার সহ ১০ মেগাপিক্সেলের টেলিফটো শুটার। একইভাবে সেলফির এবং ভিডিও চ্যাটের জন্য আলোচ্য ডিভাইসের কভার ডিসপ্লেতে এফ/২.২ অ্যাপারচার সহ ১০ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট-ফেসিং সেন্সর এবং ইনার / প্রাইমারি স্ক্রিনে এফ/১.৮ অ্যাপারচার সহ ৪ মেগাপিক্সেলের আন্ডার ডিসপ্লে ক্যামেরা লক্ষ্যণীয়৷

ক্যামেরা বিভাগের ক্ষেত্রে, অ্যাপল আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ সহ এসেছে। এই ক্যামেরাগুলি হল – অপ্টিক্যাল ইমেজ স্টেবিলাইজেশন (OIS) সহ ৪৮ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা, ৩এক্স অপ্টিঅ্যাল জুম সহ ১২ মেগাপিক্সেল টেলিফটো ক্যামেরা এবং ১২০-ডিগ্রি ফিল্ড-অফ-ভিউ সহ ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স। এই রিয়ার ক্যামেরাগুলি দুর্দান্ত লো লাইট ফটোগ্রাফি অফার করবে বলে দাবি করা হয়েছে। আবার ডিভাইসের সামনে এফ/১.৯ অ্যাপারচার সহ ১২ মেগাপিক্সেল ট্রু-ডেপ্থ সেলফি ক্যামেরা রয়েছে।

Samsung Galaxy Z Fold 5 vs Apple iPhone 14 Pro Max : ব্যাটারি, চার্জিং ক্যাপাসিটি

স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৫ স্মার্টফোনে কানেক্টিভিটি অপশন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত থাকছে – 5G, 4G LTE, ওয়াই-ফাই ৬ই এবং ব্লুটুথ ৫.৩। আবার পাওয়ার ব্যাকআপের জন্য থাকছে ৪,৪০০ এমএএইচ ক্যাপাসিটির ব্যাটারি। এই ব্যাটারিকে ২৫ ওয়াট চার্জিং অ্যাডাপ্টারের সাথে সংযুক্ত করে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে ৫০% পর্যন্ত চার্জ করা সম্ভব। এছাড়া হ্যান্ডসেটটি ফাস্ট ওয়্যারলেস চার্জিং ২.০ এবং অন্যান্য ডিভাইসের জন্য ওয়্যারলেস পাওয়ার-শেয়ার প্রযুক্তির সাপোর্টও অফার করে।

কানেক্টিভিটির জন্য অ্যাপল আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্সে – ওয়াই-ফাই ৮০২.১১ এ/বি/জি/এসি/৬, হটস্পট, ব্লুটুথ ৫.৩, জিপিএস, গ্যালিলিও, এনএফসি, ইউএসবি ২.০ পোর্ট সামিল থাকছে। আলোচ্য ডিভাইসে ৪,৩২৩ এএমএইচ ক্যাপাসিটির লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা ওয়্যারড চার্জিংয়ের পাশাপাশি ১৫ ওয়াট ওয়্যারলেস (ম্যাগসেফ) এবং ৭.৫ ওয়াট ওয়্যারলেস (কিউআই) চার্জিং প্রযুক্তিও সাপোর্ট করে।

Samsung Galaxy Z Fold 5 vs Apple iPhone 14 Pro Max : রেটিং, পরিমাপ

স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড স্মার্টফোনের পরিমাপ ভাঁজ অবস্থায় ৬৭.১x১৫৪.৯x১৩.৪ মিমি ও খোলা অবস্থায় ১২৯.৯x১৫৪.৯x৬.১ মিমি এবং ওজনে এটি ২৫৩ গ্রাম। ডিভাইসটি জল প্রতিরোধের জন্য IPX8 রেটিং প্রাপ্ত।

অ্যাপল আইফোন ১৪ প্রো মাস মডেলের পরিমাপ ১৬০.৭x৭৭.৬x৭.৯ মিমি এবং ওজন ২৪০ গ্রাম। এটি IP68 রেটিং প্রত্যয়িত।

Samsung Galaxy Z Fold 5 vs Apple iPhone 14 Pro Max : দাম

ভারতে স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৫ স্মার্টফোনের দাম শুরু হচ্ছে ১,৫৪,৯৯৯ টাকা থেকে। এই দাম ফোনটির ১২ জিবি র‍্যাম + ২৫৬ জিবি স্টোরেজ যুক্ত বেস ভ্যারিয়েন্টের। এছাড়া ১২ জিবি র‍্যাম + ৫১২ জিবি স্টোরেজ ও ১২ জিবি র‍্যাম+ ১ টিবি স্টোরেজ সহ আসা টপ-এন্ড মডেলের দাম যথাক্রমে ১,৬৪,৯৯৯ টাকা এবং ১,৮৪,৯৯৯ টাকা ধার্য করা হয়েছে। এটিকে – আইসি ব্লু, ফ্যান্টম ব্ল্যাক এবং ক্রিম কালার অপশনে পাওয়া যাবে। যদিও ১ টিবি স্টোরেজ বিকল্পটিকে শুধুমাত্র আইসি ব্লুতে উপলব্ধ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, অ্যাপল আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স ফোনকে মোট চারটি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টে নিয়ে আসা হয়েছে এদেশে। যার মধ্যে ১২৮ জিবি স্টোরেজ যুক্ত বেস ভ্যারিয়েন্টের দাম থাকছে ১,৩৯,৯০০ টাকা। আর এর ২৫৬ জিবি, ৫১২ জিবি এবং ১ টেরাবাইট স্টোরেজ সহ আসা টপ-এন্ড মডেলকে যথাক্রমে ১,৪৯,৯০০০ টাকা, ১,৬৯,৯০০ টাকা ও ১,৮৯,৯০০ টাকায় পাওয়া যাবে। এটিকে – স্পেস ব্ল্যাক, সিলভার, গোল্ড এবং ডিপ পার্পল কালার অপশনে লঞ্চ করা হয়েছে।