ফের ঝটকা! চার্জার ছাড়াই আসতে চলেছে OnePlus, Oppo স্মার্টফোন

পরিবেশগত সুরক্ষার দোহাই দিয়ে ২০২০ সাল থেকেই iPhone-এর সাথে চার্জিং অ্যাডাপ্টার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বখ্যাত টেক জায়েন্ট Apple। এরপর কার্পেটিনো ভিত্তিক প্রযুক্তি সংস্থাটির দেখাদেখি এই পন্থা অবলম্বন করেছে প্রখ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ান টেক কোম্পানি Samsung; তারাও তাদের প্রিমিয়াম এবং বেশ কয়েকটি মিড-রেঞ্জের স্মার্টফোন বক্সের মধ্যে এখন আর চার্জার দেয় না। এবং এদের পাশাপাশি Google-ও ইতিমধ্যেই এই তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছে। আবার হালফিলে জানা গিয়েছে যে, এবার উক্ত কোম্পানিগুলির দেখানো পথে হাঁটতে চলেছে আরও দুটি খ্যাতনামা ব্র্যান্ড।

ইন-বক্স চার্জার সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে OnePlus এবং Oppo

সম্প্রতি টিপস্টার মুকুল শর্মা (Mukul Sharma) তার Twitter অ্যাকাউন্টে জানিয়েছেন যে, OnePlus এবং Oppo খুব শীঘ্রই ভারতে ইন-বক্স চার্জার দেওয়া বন্ধ করে দিতে চলেছে। অর্থাৎ, এবার এদেশের নাগরিকরা OnePlus এবং Oppo-র ফোন কিনলে বক্সের মধ্যে ডিভাইসটির চার্জার পাবেন না। তবে এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, সংস্থাদ্বয়ের তরফে কিন্তু এখনও এই বিষয়ে কোনো সুনিশ্চিত ঘোষণার খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু শর্মা বেশ জোর দিয়েই বলেছেন যে, তিনি এক বিশ্বস্ত সূত্র মারফতই সম্প্রতি একথা জানতে পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে ইতিমধ্যে যেহেতু অনেকগুলি খ্যাতনামা কোম্পানিই এই কাজ করে ফেলেছে, তাই ইউজারদের এই খবরটি শুনে খুব একটা অবাক নাও লাগতে পারে।

ইউজারদের সুবিধার্থে অনেক কোম্পানিই কিন্তু এখনও ফোনের বক্সে চার্জার দিচ্ছে

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ভিভো (Vivo), আইকো (iQOO) এবং শাওমি (Xiaomi)-র মতো সংস্থাগুলি কিন্তু এখনও তাদের স্মার্টফোনের সাথে ইন-বক্স চার্জার সরবরাহ করে। এছাড়া, স্যামসাংয়ের বাজেট রেঞ্জের ফোনগুলিও বর্তমানে চার্জার সহ আসে। তবে কয়েক মাস আগে রিয়েলমি (Realme) তাদের রিয়েলমি নারজো ৫০এ প্রাইম (Realme Narzo 50A Prime) ফোনটিকে চার্জার ছাড়াই মার্কেটে উপলব্ধ করেছিল। যদিও গ্রাহকদেরকে আশ্বস্ত করে সংস্থাটি ইতিমধ্যেই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, কেবলমাত্র একটি স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেই এই কাজ করা হয়েছে; তবে কোম্পানির বাকি সমস্ত হ্যান্ডসেটের সাথেই চার্জার পাবেন ক্রেতারা।

ঠিক কী কারণে ইন-বক্স চার্জার সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে?

এখন প্রশ্ন হল, প্রযুক্তি সংস্থাগুলি কেন ইন-বক্স চার্জার সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? সেক্ষেত্রে বলি, দীর্ঘদিন ধরে এই প্রশ্নটিকে ঘিরে এতই জলঘোলা হচ্ছে, যার ফলে এর উত্তর এখন আমাদের কমবেশি সকলেরই জানা। অ্যাপল এর জবাবে জানিয়েছিল যে, আইফোনের সঙ্গে চার্জার না দিলে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টন কার্বন নিঃসরণ কমে যাবে, যা পরিবেশের সুস্থতার জন্য খুবই ফলদায়ক। কোম্পানির দাবি অনুযায়ী, পরিবেশ দূষণ কমানোর পাশাপাশি সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর বাকি টেক ব্র্যান্ডগুলিও এই কাজ করার কারণ হিসেবে অ্যাপলের সুরেই সুর মিলিয়েছে।

ফোনের বক্স থেকে চার্জার সরিয়ে নেওয়ার কারণটি কি আদৌ যুক্তিযুক্ত?

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, পরিবেশ সুরক্ষার দোহাই দিয়ে কোম্পানিগুলি ফোনের বক্সে চার্জার দেওয়া বন্ধ করলেও গ্রাহকদের কিন্তু সেটিকে আলাদাভাবে অনলাইন কিংবা অফলাইনে কিনতেই হচ্ছে। এর ফলে চার্জার বিক্রি হওয়া কিন্তু কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না, বরং বক্সে চার্জার না দিয়ে ঘুরপথে সেটি বিক্রি করে স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থাগুলি নিজেদের ব্যবসায়িক মুনাফা বৃদ্ধি করছে। এক রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, ফোনের বক্সের মধ্যে চার্জার এবং ইয়ারবাডস না দিয়ে সেগুলিকে আলাদাভাবে বিক্রি করায় প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে কার্পেটিনো ভিত্তিক টেক কোম্পানি অ্যাপল। তাই ফোনের সাথে চার্জার না দেওয়ার জন্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলির তরফে দেখানো যুক্তি সম্পূর্ণভাবে অর্থহীন তথা অযৌক্তিক বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।

iPhone-এর বক্সে চার্জার না দেওয়ায় Apple-কে মোটা টাকা জরিমানার মুখে ফেলেছিল ব্রাজিল

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, বক্সের মধ্যে চার্জার না দেওয়ার ফলে ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ iPhone ক্রেতাকে চরম অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এর জেরে তিতিবিরক্ত হয়ে Apple-কে বারংবার কাঠগড়ায় তুলেছেন ব্যবহারকারীরা। আর শুধু ইউজাররাই নয়, অনেক দেশই সংস্থাটির এই স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হল ব্রাজিল। iPhone-এর বক্সে চার্জার না দেওয়ার জন্য Apple-কে মাসখানেক আগে ১৯ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৫৬ কোটি টাকা) জরিমানা করেছিল দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি, এবং সেইসাথে সংস্থাটিকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিল যে, iPhone-এর বক্সে অবশ্যই চার্জার দিতে হবে। সেদেশের সরকারের মতে, চার্জার না দেওয়ায় গ্রাহকদেরকে অসম্পূর্ণ প্রোডাক্ট বিক্রি করছে মার্কিনি টেক সংস্থাটি, যা একেবারেই অন্যায্য। ফলে সবদিক বিচার-বিবেচনা করে OnePlus এবং Oppo এবার আগামী দিনে ঠিক কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা একমাত্র সময়ই বলতে পারবে।