Tata-র আগেই 400 কিমি মাইলেজের প্রথম H2 প্রযুক্তির কার্গো গাড়ি লঞ্চ করবে দেশীয় সংস্থা

পৃথিবীতে জীবাশ্ম জ্বালানির ভান্ডার যে সীমিত তা আমাদের কারোর অজানা নয়। তাছাড়াও পরিবেশ দূষণের কথা মাথায় রেখে পেট্রোল-ডিজেলের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমানো যায় ততই ভালো। এই কারণেই আজকালকার দিনে বৈদ্যুতিক যানবাহনের উপর বেশি করে জোর দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন দেশের তরফে। আবার পরিবহন ক্ষেত্রে সবুজ জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেনের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা চলছে বিস্তর। ইতিমধ্যেই এই ধরনের যাত্রী গাড়ি বিভিন্ন দেশে উপলব্ধ থাকলেও, এবার হাইড্রোজেন চালিত ছোট বাণিজ্যিক গাড়ি আসতে চলেছে ভারতে।

জানুয়ারিতে অটো এক্সপোতে Tata Motors এবং Ashok Leyland এর নামকরা সংস্থারা H2ICE (হাইড্রোজেন ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিন) প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে তৈরি হেভি ডিউটি ট্রাক প্রদর্শন করেছে। আবার আগামী ডিসেম্বরে দেশে আত্মপ্রকাশ করবে হাইড্রোজেন প্রযুক্তির প্রথম কার্গো থ্রি হুইলার। সৌজন্যে দেশীয় সংস্থা ওমেগা সেইকি মোবিলাটি (Omega Seiki Mobility) বা ওএসএম।

Omega Seiki

ইলেকট্রিক ভেহিকেল নির্মাতা ওএসএম হাইড্রোজেন টেকনোলজির দুনিয়ায় সদ্য পা রেখেছে। তবে এক্ষেত্রে তারা হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল প্রযুক্তির ব্যবহার করবে। এই প্রকল্প নিয়ে দুই বছর ধরে কাজ চালু রয়েছে এবং বর্তমানে ফ্রান্সে টেকনোলজিটির উন্নতি সাধন এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম বজায় রেখেছে তারা।সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং অধিকর্তা উদয় নারাং বলেছেন, ” এটা এই মুহূর্তে পরীক্ষারত অবস্থায় রয়েছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যেই ফ্রান্সে প্রথম প্রদর্শন করা হবে এই গাড়িটির। তার ঠিক ৩ মাসের মাথায় আগামী ডিসেম্বরে ভারতের পদার্পণ করবে এটি।”

যদি সমস্ত পরিকল্পনা সঠিক রাস্তায় রূপায়িত হয় তবে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়েই হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল পরিচালিত গাড়ি লঞ্চ করা হতে পারে। সংস্থার সূত্রে জানা গিয়েছে তিন চাকার কার্গো মডেলটি সম্পূর্ণ রিফুয়েল করার পর ৪০০ কিমি পর্যন্ত ড্রাইভিং রেঞ্জ দিতে পারবে। অর্থাৎ ওমেগার সাধারণ ইলেকট্রিক কার্গো ক্যারিয়েরারে তুলনায় চার গুণ রাইডিং রেঞ্জ দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের।

তবে একটি বিষয় স্পষ্ট এই নতুন প্রযুক্তির ব্যাটারি থ্রি-হুইলাররের দাম অনেকটাই বেশি হবে। অনেকেরই ধারণা এক্ষেত্রে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা দিতে হবে কোনো গ্রাহককে। যদিও নারাং এর মতে তা কেবলমাত্র ৫০ শতাংশ বেশি। বর্তমানে সংস্থার হাতে থাকা সাধারণ ব্যাটারি যুক্ত তিন চাকার গাড়িগুলি কিনতে মোটামুটি ভাবে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। তবে ওমেগার কর্ণধারের মতে অতিরিক্ত রাইডিং রেঞ্জ এবং কম চার্জিং এর সময় থাকার জন্যই এই গাড়িগুলি ব্যবহারের খরচ নগণ্য। তাঁর দাবি, সারাদিন ব্যবহার করলেও ২-৩ দিনে একবার চার্জ করার প্রয়োজন হবে আপনার।

শুরুর দিকে এই হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ভেহিকেল কেবলমাত্র ইউরোপের দেশগুলির জন্যই ডেভেলপ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ভারত সরকার দেশে এমন প্রযুক্তি আনার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। উদয় নারাং এই বিষয়ে বলেন, “আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি তার কারণ ভবিষ্যতে ভারতে হাইড্রোজেন প্রযুক্তির জন্য যথেষ্ট চাহিদা তৈরি হবে।” তাছাড়াও নতুন গাড়ি প্রকল্পে খরচ খানিকটা কমাতেই এবং দেশীয় প্রযুক্তির ওপর ভরসা রাখতেই আইআইটির সাথে হাত মিলিয়েছে ওমেগা।

তবে চিন্তার বিষয় হল ভারতের বিভিন্ন গাড়ি নির্মাতারা হাইড্রোজেন প্রযুক্তি নিয়ে কাজকর্ম শুরু করলেও আমাদের দেশে হাইড্রোজেনের উৎপাদন পরিকাঠামো তেমন ভাবে উন্নত নয়। তবে মোদি সরকার শেষ ঘোষণা করা বাজেটে ন্যাশনাল গ্রিন হাইড্রোজেন মিশনের জন্য ১৯,৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ওমেগার কর্ণধারের কথায় বেশ কয়েকটি “হাইড্রোজেন ভ্যালি” আগামীতে বিভিন্ন শহরে স্থাপন করা হবে। সেই সব জায়গা থেকেই পর্যাপ্ত হাইড্রোজেন সংগ্রহ করবে তারা।