Apple কে পিছনে ফেললো Xiaomi, ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড Samsung

গ্লোবাল স্মার্টফোন মার্কেটে একটি স্থায়ী জায়গা দখলের উদ্দেশ্যে বিগত এক দশক ধরে যথেষ্টই পরিশ্রম করেছে Xiaomi। আর ফলস্বরূপ, বর্তমানে আলোচ্য সংস্থা দ্বারা বিকশিত স্মার্টফোন, ট্যাবলেট থেকে শুরু করে ইয়ারফোন, এমনকি ওয়েটিং-স্কেল মেশিন পর্যন্ত ব্যাপক ভাবে বিক্রি হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। শুধু তাই নয়, উন্নত গুণমান যুক্ত গ্যাজেট এনে এবং গ্রাহক-বেসের আস্থা অর্জন করে বেইজিং-ভিত্তিক কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডটি এখন বিশ্বের বহু আঞ্চলিক বাজারে সুনামও কুড়োচ্ছে।

সম্প্রতি Xiaomi Corporation এর ২০২২ সালের দ্বিতীয় কোয়ার্টারের (Q2 2022) আর্থিক এবং মার্কেট শেয়ারের ত্রৈমাসিক রিপোর্ট সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর এই রিপোর্ট দেখে আমরা রীতিমতো আশ্চর্যচকিত হয়ে গিয়েছি। কেননা সদ্য প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, আমেরিকা ভিত্তিক টেক জায়ান্ট Apple -কে পেছনে ফেলে Xiaomi এখন ইউরোপের বাজারে দ্বিতীয় জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হওয়ার মাইলস্টোন গড়েছে।

ইউরোপের দ্বিতীয় জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার তকমা পেলো Xiaomi

ব্র্যান্ডের অফিসিয়াল গ্লোবাল নিউজরুম দ্বারা শেয়ার করা এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, “আমাদের সংস্থা বিশ্বব্যাপী ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হয়েছে এবং একই সাথে বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন দেশের বাজারে নিজেদের মার্কেট শেয়ার ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করছে।” পাশাপাশি, ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইউরোপে রপ্তানিকৃত মোট স্মার্টফোনের মধ্যে ২১.৭% শাওমি একাই চালান করার মাধ্যমে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। এক্ষেত্রে, বর্তমানে ইউরোপের ‘মোস্ট পপুলার স্মার্টফোন ব্র্যান্ড’ তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে অ্যাপল (Apple) এবং প্রথম স্থান এখনো স্যামসাংয়ের (Samsung) দখলে।

তদুপরি, চলতি বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে গ্লোবাল মার্কেটে শাওমির পারফরম্যান্স কিরূপ ছিল সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরাও জরুরি। জানা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন শিপমেন্টের ক্ষেত্রে ৫৫টি বাজারে ‘টপ-৩’ এবং ৬৭টি বাজারে ‘টপ-৫’ তালিকায় সামিল রয়েছে বেইজিং-ভিত্তিক টেক ব্রান্ডটি। শাওমি কর্পোরেশনের লেটেস্ট রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে – মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকা জুড়ে তারা মার্কেট শেয়ারের ক্ষেত্রে কোয়ার্টার-অন-কোয়ার্টার (QOQ) গ্রোথ রেকর্ড করেছে।

রেভেনিউ বা রাজস্বের পরিপ্রেক্ষিতে, Xiaomi দ্বারা অর্জিত মোট রেভেনিউয়ের ৪৮.৪% হল ওভারসিস রেভিনিউ (বিদেশী রাজস্ব)। অর্থাৎ, সংস্থার মোট রেভেনিউয়ের প্রায় অর্ধেক এখন অনেকটাই ওভারসিস (বিদেশি) অপরেশনের উপর নির্ভরশীল। যার দরুন, মুনাফার মুখ দেখার জন্য শাওমির এখন ‘হোম-মার্কেট’ চীনের উপর নির্ভরতা অনেকখানি হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গ্লোবাল ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি অনুসারে, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে ধারাবাহিকভাবে চতুর্থ বারের জন্য ‘ফরচুন গ্লোবাল ৫০০’ (Fortune Global 500) এর তালিকায় শাওমির নাম উঠেছিল। সর্বোপরি, সংস্থাটি ২০২১ সালে যেখানে ৩৩৮তম স্থানে ছিল, সেখানে চলতি বছরে ২৬৬তম স্থান অধিকারী করেছে। ফলত গ্লোবাল মার্কেটে শাওমির প্রতিপত্তি ও স্বীকৃতি যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে।

গ্লোবাল মার্কেটে শাওমির পারফরম্যান্স কিরূপ সেই সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই অবগত। কিন্তু এভাবে একের পর এক মাইলস্টোন পেরোনোর নেপথ্যে থাকা কারণগুলিও একটু খতিয়ে দেখা দরকার। মনে করা হচ্ছে যে, “২০২২ সালের মে মাসে, শাওমি লাইকার (Leica) সাথে ইমেজিং টেকনোলজি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ” ঘোষণা করার পর থেকেই রেভেনিউতে পার্থক্য নজরে পড়তে থাকে। একই সাথে বিশ্ব বাজারে নিজেকে একটি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শাওমি R&D (Research and development) বিভাগেও ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। যা নতুন নতুন টেকনোলজি উদ্ভাবনে সাহায্য করবে। সর্বোপরি লাইকার সাথে হাত মিলিয়ে সম্প্রতি উন্নত ক্যামেরা টেকনোলজি সমন্বিত Xiaomi 12S Ultra এবং Xiaomi Mix Fold 2 স্মার্টফোন ঘোষণা করার পর, স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রিতে আরো পাকাপাকিভাবে নিজের জায়গা তৈরী করে নিতে সক্ষম হয়েছে শাওমি।