হার্ট অ্যাটাকের আগাম সতর্কতা, বৃদ্ধের জীবন বাঁচিয়ে ফের হিরো Apple Watch

হৃদরোগে আক্রান্ত ৩৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তির জীবন বাঁচালো Apple Watch

আপৎকালীন পরিস্থিতিতে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে Apple Watch-এর জুড়ি মেলা ভার! কার্পেটিনো ভিত্তিক টেক কোম্পানিটি কর্তৃক নির্মিত এই ডিভাইসে অজস্র হেলথ ও ফিটনেস ফিচার বিদ্যমান। এর মধ্যে রয়েছে ব্লাড অক্সিজেন স্যাচুরেশন (SpO2) ট্র্যাকার, হার্ট রেট মনিটর, আট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (AFib) ডিটেক্টর, ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ECG) মনিটর, এমার্জেন্সি কল ফিচার ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সাধারণ সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি Apple Watch-এর একাধিক কার্যকর হেলথ ট্র্যাকিং ফিচার ইউজারের জীবন রক্ষায় ত্রাতারূপে কাজ করেছে, এমন ঘটনার কথা আমরা একাধিকবার শুনেছি। সম্প্রতি আবারও একবার যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ডশায়ারের ফ্লিটউইকের ৩৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে আগাম হৃদরোগের সতর্কতা প্রদান করে তার প্রাণ বাঁচালো এই চমকপ্রদ ঘড়ি। আসুন, ঘটনাটির সম্পর্কে বিশদে জেনে নেওয়া যাক।

হৃদরোগে আক্রান্ত ৩৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তির জীবন বাঁচালো Apple Watch

বিবিসি (BBC)-র রিপোর্ট অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ডশায়ারের ফ্লিটউইকের ৩৬ বছর বয়সী অ্যাডাম ক্রফ্ট (Adam Croft) নামের এক ব্যক্তি একদিন সন্ধ্যায় সোফা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় হঠাৎই প্রচণ্ড অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করেন। তাই অস্থিরতা কাটাতে তিনি রান্নাঘরে গিয়ে একটু জল পান করার কথা ভাবেন। কিন্তু আচমকাই তার চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়। তিনি দরদর করে ঘামতে শুরু করেন এবং তার শরীর আনচান করতে থাকে। যাইহোক, সেই রাতটা কোনোরকমে কাটিয়ে দেওয়ার পর পরের দিন সকালে তিনি আবিষ্কার করেন যে, তার হাতে থাকা অ্যাপল ওয়াচটি আগের দিন সারারাত ধরে তাকে সতর্ক করেছে যে, তার হার্ট অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন বা এএফআইবি (AFib)-তে রয়েছে। অর্থাৎ, তার হৃদস্পন্দন একেবারেই স্বাভাবিক নয়। ফলে সতর্কতা পেয়ে তৎক্ষণাৎ তিনি যুক্তরাজ্যের মেডিকেল হেল্পলাইন নম্বর ১১১-তে কল করেন এবং সেখানে তাকে অবিলম্বে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এরপর বেডফোর্ড হাসপাতালে যাওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসকরা ক্রফ্টকে পরীক্ষা করে একদম নিশ্চিতভাবে জানিয়ে দেন যে, তার হার্ট সত্যি সত্যিই এএফআইবিতে রয়েছে। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি যদি অ্যাপল ওয়াচ মারফত কোনো সতর্কতা না পেতেন, তবে তিনি কখনোই হাসপাতালে যাওয়ার কথা ভাবতেন না। এই প্রসঙ্গে ক্রফ্ট জানিয়েছেন যে, বহু পূর্বে তিনি তার হার্টে সামান্য অস্বস্তি অনুভব করেছিলেন, যেটি কিন্তু তার হাতঘড়িতে ধরা পড়েনি। তবে এর পরে সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল, কখনো তিনি কোনো গুরুতর ব্যথা বা কোনো উল্লেখযোগ্য উপসর্গ অনুভব করেননি, যা থেকে তিনি আঁচ করতে পারতেন যে তার হার্টে বেশ বড়োসড়ো গোলযোগ দেখা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে আলোচ্য ঘটনাটি ঘটার পরেও হয়তো তার টনক নড়তো না, কিন্তু অ্যাপল ওয়াচের সতর্কতাতেই এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেলেন অ্যাডাম ক্রফ্ট। উল্লেখ্য, এর জন্য তিনি অ্যাপল কোম্পানি সহ এই চমকপ্রদ ঘড়িটিকে তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

সঠিক সময়ে সতর্কতা না পাওয়া গেলে এমত পরিস্থিতিতে প্রাণে বাঁচা খুবই কঠিন

উল্লেখ্য যে, হাসপাতালের চিকিৎসকরা ওই ব্যক্তির হার্টের সমস্যা নির্ধারণ করার পর তার রক্তকে পাতলা করার জন্য ক্রফ্টকে এখন একটি কার্ডিওভার্সন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে তার হৃদস্পন্দন নিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি তার হার্টের যাবতীয় সমস্যাও দূর হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এএফআইবি হল হার্টের এমন একটি সঙ্কটজনক অবস্থা, যেখানে হার্ট অনিয়মিতভাবে বা খুব দ্রুত স্পন্দন করে। এর ফলে স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিওরের মতো দুর্ঘটনাগুলি ঘটার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হল, এএফআইবি বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। আর যেহেতু এটি প্রায়শই উপসর্গহীন হয়, তাই আগেভাগে ধরা পড়ে মানুষের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে যায়। তবে বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে মার্কেটে যখন অ্যাপল ওয়াচ আছে, তখন কুছ পরোয়া নেহি! ইউজাররা এখন অতি অনায়াসেই আগাম সতর্কতা পেয়ে এই ধরনের প্রাণহানিকর রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে সক্ষম হবেন।