অনলাইন ক্লাসে মনোযোগ না দেওয়ায় ‘জুম ডিটেকশন’ এর শাস্তি শিক্ষার্থীকে

বিগত কয়েক বছরে মানুষ ভার্চুয়াল জগতেই বেশি সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু, করোনা অতিমারীর আগের সময় আর এখনের সময়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক! বিগত এক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে আমাদের লাইফস্টাইলে, অভ্যেসে, হাঁটাচলায়, পড়াশোনা বা পঠন-পাঠনের ধাঁচে এবং অন্যান্য নানা কর্মকান্ডেও। করোনার জেরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলি বন্ধ থাকলেও বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই Zoom, Google Meet জাতীয় অ্যাপগুলির মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসের সাহায্যে পঠন-পাঠন চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু এই বিশেষ ধরনের “ডিসট্যান্স এডুকেশন”, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের দিকে যে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে তা সম্প্রতি আরো একবার প্রমাণিত হয়ে গেছে। আসলে যখন শিক্ষকরা একটি অনলাইন ক্লাসের সময় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করাতে প্রাণপণ লড়াই করছেন, তখন শিক্ষার্থীরা নিজের বাড়ির পরিবেশে সাবলীল থাকায় ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কারণে ‘জুম ফ্যাটিগ’ অনুভব করছে, অর্থাৎ তারা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে।

সেক্ষেত্রে এতদিন শ্রেণীকক্ষের চার দেয়ালের মধ্যে নানা শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও, এখন সব কিছুই হাতের নাগালের বাইরে! তবে Zoom-এ ক্লাস নেওয়া শিক্ষকরা সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার নতুন উপায় খুঁজে বের করেছেন – এমনটাই সাম্প্রতিক একটি ঘটনা দেখে মনে করা হচ্ছে। আসলে, অনলাইন ক্লাসে মনোযোগ না দেওয়ার জন্য এক শিক্ষার্থী ‘জুম ডিটেনশন’-এর শিকার হয়েছে বলে টুইট করেছেন তার মা। ইতিমধ্যে নেটদুনিয়ায় এই টুইটিকে বেশ ভাইরাল হতেও দেখা গিয়েছে। আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

সম্প্রতি পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক উজু আনিয়া জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং প্ল্যাটফর্মে বেশ কয়েকটি টুইট পোস্ট করে জানিয়েছেন যে, তার সন্তান জুমে ফোর্থ গ্রেডের ক্লাস চলাকালীন মনোযোগ না দেওয়ায় জন্য তাকে জুম ডিটেনশনে পাঠানো হয়েছে। আনিয়ার সন্তানের শিক্ষক, তাঁকে ইমেলের মাধ্যমে ৯ বছরের বাচ্চাটির ক্লাসে মনোযোগ না দেওয়ার বিষয়ে অবহিত করেছেন এবং তাঁর বাচ্চা সময়মতো অ্যাসাইনমেন্টগুলি শেষ করতে পারে না বলেও দাবি করেছেন। এক্ষেত্রে আনিয়া নিজেও স্বীকার করেছিলেন যে তার মেয়ে প্রায়শই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে, কম্পিউটার গেম খেলে, অনলাইন ক্লাসে শিক্ষককে উপেক্ষা করে বা জুম থেকে সাইন অফ করে। এই বিষয়ে তিনি শিক্ষককে দোষ দেননি, তবে এই ‘জুম ডিটেনশন’ ব্যাপারটি তাঁর কাছে হাস্যকর তথা বিরক্তিকর লেগেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে আনিয়া এও জানিয়েছেন যে, তিনি এই ধরনের অত্যাধুনিক নিয়মগুলির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা করছেন।

জুম ডিটেনশন বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আনিয়া লিখেছেন, শিক্ষক, অনলাইন ক্লাসে বারবার শিক্ষার্থীকে মনসংযোগ করার জন্য মৌখিক সতর্কবাণী দেন, কিন্তু ছাত্র বা ছাত্রীটি সেই কথা না শুনলে তাকে অধ্যক্ষের অফিসে পাঠানো হয় (সম্ভবত অধ্যক্ষের সাথে অনলাইন কনফারেন্সের ব্যবস্থা করে তাকে আটক রাখা হয়) এবং তার বাবা-মাকেও জানানো হয়; এই ঘটনায় তার এই আচরণের কারণ সম্পর্কে আলোচনা বা কথা বলার জন্য দায়বদ্ধ থাকে।

প্রসঙ্গত, প্রফেসর আনিয়ার টুইটটির এখনও পর্যন্ত ৩১,০০০টিরও বেশি রিটুইট এবং ৩৫৬০টি কোট (quote) টুইট হয়েছে। তাছাড়া এটি প্রায় ৩৩,৬২০টি লাইকও পেয়েছে। সেক্ষেত্রে অনেক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী যারা অনলাইন ক্লাসের ট্রায়াল এবং ট্রাইবুলেশনস সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, তারা ‘জুম ডিটেনশন’ নামে একটি নতুন শব্দ জানতে পেরেছেন। যদিও শিক্ষার্থীদের এইভাবে ‘জুম ডিটেনশন’ করা উচিত কি না সেই বিষয়টি বেশ তর্কসাপেক্ষ বলে বিবেচিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, এই ঘটনাটি মোটেও জুম ডিটেকশনের প্রথম দৃষ্টান্ত নয়। করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে, জুম ডিটেনশন এবং অনলাইন সাসপেনশনের অনেক ঘটনা (বিশেষ করে পশ্চিমের দেশে) আগেই সামনে এসেছে। যেমন এর আগে, কলোরাডোয় ১২ বছর বয়সী এক শিশুকে ক্লাসে মনোযোগ না দেওয়ার জন্য এবং খেলনা বন্দুক নিয়ে খেলার জন্য পাঁচ দিনের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন