iPhone vs Android: নয়া রিপোর্টে ফের অ্যান্ড্রয়েডের হার আইফোনের

স্মার্টফোন মার্কেটে আইফোন (iPhone) ডিভাইসের হাতে বরাবরই নাস্তানাবুদ হয়ে থাকে অ্যান্ড্রয়েড (Android) হ্যান্ডসেট। কিন্তু, সম্প্রতি পরিচালিত একটি সার্ভেতে একটি বিষয়ে আইফোনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে অ্যান্ড্রয়েড। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের নিয়ে করা একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা অ্যাপল ডিভাইসের মালিকদের তুলনায় অনেক বেশি নম্র এবং ভাল ড্রাইভার। স্মার্টফোন কার ইন্স্যুরেন্স কম্প্যারেটর বা তুলনাকারী, জেরি (Jerry) হালফিলে এই ফলাফলাটি প্রকাশ করেন অনলাইনে। রিপোর্টে, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারীদের ‘সবচেয়ে ভালো গাড়ি চালক’ এর তকমা দেওয়া হয়েছে।

iPhone ব্যবহারকারীদের থেকে বহুগুন ভালো ড্রাইভিং আচরণ দেখা গেছে Android ইউজারদের মধ্যে

সদ্য পরিচালিত সার্ভে রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ১৩ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত গাড়ি চালানোর সময় সংগৃহীত মোট ২০,০০০ চালকের ড্রাইভিং আচরণ বিশ্লেষণ করে তবেই ফলাফলে উপনীত হয়েছে জেরি। সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে যে – ওভারঅল সেফ ড্রাইভিং, স্পিডিং, ডিস্ট্রাকশন, টার্নিং, ব্রেকিং এবং এসলেরাটিং বা উত্তরোত্তর গতি বৃদ্ধি – এই প্রত্যেকটি বিভাগে আইফোন ব্যবহারকারীদের তুলনায় অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ভালো এবং ‘সেফ’ ড্রাইভিং স্কোর অর্জন করেছে। এরূপ ঘটনার বিশ্লেষণে, জেরি, সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হিসাবে বিক্ষিপ্ত ড্রাইভিংকে নির্দেশ করেছেন। সোজা ভাবে বললে, আইফোন মালিকদের মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের তুলনায় গাড়ি চালানোর সময় ফোন চেক করার প্রবণতা বেশি। ফলে ড্রাইভিংয়ের সময় আইফোন অধিকারীদের মনোযোগের অভাব প্রতিফলিত হয় তাদের গাড়ি চালানোর ভঙ্গিমায়।

তদুপরি, “জেরি ১৪ দিনের সময়কালে, ১৩ মিলিয়ন কিলোমিটার পর্যন্ত গাড়ি চালিয়েছে এমন ২০,০০০ ড্রাইভারের কাছ থেকে সংগৃহীত ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন। এই ডেটায় – এসলেরাটিং, স্পিড, ব্রেকিং, টার্নিং এবং ডিস্ট্রাকশন প্রতিটি বিভাগের জন্য একটি সামগ্রিক ড্রাইভিং স্কোর এবং সাব-স্কোর তৈরি করা হয়েছে। তারপর, আমরা স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম এবং বিভিন্ন জনসংখ্যা-বিষয়ক বৈশিষ্ট্যের (demographic characteristics) নিরিখে এই ফলাফলকে গোষ্ঠীভুক্ত করেছি,” বলে রিপোর্ট আরো উল্লেখ করা হয়েছে।

সমীক্ষায়, “বিবাহিত, নিজস্ব বাড়ির মালিক, মিডওয়েস্টের অধিবাসী, স্নাতক বা আরও উচ্চ ডিগ্রী প্রাপ্ত এবং উচ্চতর ক্রেডিট রেটিং” আছে এমন বয়সপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ নম্বর স্কোর করেছেন৷ আবার ডিভাইস নির্বিশেষে, পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা সর্বোচ্চ স্কোর অর্জন করেছে। যারপর, যথাক্রমে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর-ডিগ্রি প্রাপ্ত ব্যক্তিরা র‌্যাঙ্কিং বোর্ডে স্থান করে নিয়েছেন। অন্যদিকে, ড্রাইভার হিসাবে, হাই স্কুলের ডিপ্লোমা নেই এমন অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা – পিএইচডি, স্নাতকোত্তর এবং স্নাতক ডিগ্রিধারী আইফোন মালিকদের চেয়ে বেশি স্কোর করেছেন বলে দেখা গেছে রিপোর্টে।

তদুপরি, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা আইফোন ব্যবহারকারীদের মত বিলাসিতা প্রিয় হয় না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সমীক্ষায়। সেক্ষেত্রে, সমগ্র ডেটা বিশ্লেষণের পর দেখা গেছে, আইফোন মালিকদের থেকে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারীরা অধিক বিবেকবান, ন্যায়পরায়ণ এবং একই সাথে “নিয়ম ভাঙার ক্ষেত্রে সামান্য প্রলোভন অনুভব করেন।” অন্যদিকে, আইফোন ব্যবহারকারীদের আচরণ তুলনায় কম অনুমানযোগ্য এবং সঙ্গত ছিল। তবে, বেশিরভাগ অ্যাপল গ্রাহকই যথেষ্ট আবেগপ্রবণ ছিলেন এমনই তথ্য উঠে এসেছে রিপোর্টে।

স্মার্টফোন বাজারে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোন ডিভাইসের মধ্যে প্রতিযোগিতা বহু পুরোনো। যেমন, ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান এবং তুরস্কের মতো দেশগুলিতে ৮৫% মার্কেট শেয়ারের সাথে অন্যতম প্রভাবশালী প্ল্যাটফর্ম হিসাবে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। যদিও, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অ্যাপলকে হারিয়ে শীর্ষ স্থান দখল করতে এখনো সফল হয়নি অ্যান্ড্রয়েড সংস্থাগুলি। তবে, ২০২১ সালের প্রথম কোয়ার্টারে সমগ্র অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলি মিলিত ভাবে ৭১% মার্কেট শেয়ার লাভের দরুন বিশ্ববাজারে আধিপত্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বলে একটি সার্ভেতে দাবি করা হয়েছিল। যদিও অ্যাপল এর আইফোন ১১ (iPhone 11) এবং আইফোন ১২ (iPhone 12) সিরিজ দুটি ধারাবাহিক ভাবে গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। যার ফলস্বরূপ, বিগত দুই বছরে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলির মার্কেট শেয়ারে পতন লক্ষ্য করা গেছে।