মদের নেশা সর্বনাশা, অনলাইনে ৩৬০ টাকার বিয়ার কিনতে গিয়ে ৪৪,০০০ টাকা খোয়ালেন আইনজীবী

বর্তমান সময়ে অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে অনেকেই ঠকছেন বা দুর্বৃত্তদের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার সর্বত্র উল্লেখযোগ্য রকমভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় হ্যাকাররা এই জিনিসগুলিকে কাজে লাগিয়ে সহজসরল সাধারণ মানুষকে সাইবার জালিয়াতির ফাঁদে ফেলার অনর্গল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পূর্বেও এদেশে এই ধরনের একাধিক ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে, এখন ফের এরকম একটি রোমহর্ষক ঘটনার খবর সামনে এসেছে, যেখানে WhatsApp মারফত মাত্র ৩৬০ টাকার দুই বোতল বিয়ার অর্ডার করে ৪০,০০০ হাজারেরও বেশি টাকা খুইয়েছেন মুম্বইয়ের ২৪ বছর বয়সী এক আইনজীবী। আসুন ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছে জেনে নেওয়া যাক।

অনলাইনে বিয়ার কিনতে গিয়ে ৪৪,৭৮২ টাকা খোয়ালেন মুম্বইয়ের এক আইনজীবী

রিপোর্ট অনুযায়ী, গুরুগ্রামের বাসিন্দা ওই আইনজীবী মাসকয়েক আগে কাজের সূত্রে মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন। তিনি কোলাবা অঞ্চলে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সবই মোটামুটি ঠিকঠাকই চলছিল, তবে গত ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পর হঠাৎ মদ্যপান করার ইচ্ছা জাগে তার, তাই তিনি কাছাকাছি মদের দোকানের সন্ধান পেতে অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করা শুরু করেন, এবং সার্চ করতে করতে কাছাকাছি একটি মদের দোকানের নম্বরও পেয়ে যান। ফলে ওই আইনজীবী মদ অর্ডার করার জন্য তৎক্ষণাৎ ওই নম্বরটিতে ফোন করেন, কিন্তু প্রথমবার উল্টোদিক থেকে কেউ রিসিভ না করায় ফোনটি বেজে কেটে যায়।

এরপর কয়েক মিনিট বাদে ওই নম্বর থেকেই ফোন আসে আইনজীবীর কাছে, এবং তাকে হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) কলের সাহায্যে অনলাইন অর্ডারের অপশন দেওয়া হয়। তবে এই পুরো কার্যক্রমের পিছনে যে হ্যাকারদের হাতযশ রয়েছে, তা আইনের রক্ষক হয়েও ঘূণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি ওই ব্যক্তি। ফলে আর পাঁচজন যেমনভাবে অনলাইনে অর্ডার করেন, ঠিক সেভাবেই তিনি হোয়াটসঅ্যাপ মারফত দুই বোতল বিয়ার অর্ডার করে ফেলেন এবং তাকে এর জন্য ৩৬০ টাকা দিতে বলা হয়। ওই ভিক্টিম জানিয়েছেন যে, টাকা পাঠানোর জন্য তাকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি কিউআর (QR) কোড স্ক্যান করতে বলা হয়; এবং সেইসাথে কোডটি স্ক্যান করার সময় তাকে ৩৬০ টাকার সাথে ডেলিভারি ফি বাবদ অতিরিক্ত ৩০ টাকা প্রদান করার নির্দেশও দেয় স্ক্যামাররা।

এরপর মদের দোকানের মালিকের ছদ্মবেশধারী হ্যাকারদের কথায় হোয়াটসঅ্যাপে কিউআর কোড স্ক্যান করেই বিয়ারের টাকা প্রদান করতে সম্মত হন ওই আইনজীবী, আর এখান থেকেই জালিয়াতির একটি নতুন খেলা শুরু করে স্ক্যামাররা। তারা ওই আইনজীবীকে বিল জেনারেট করার জন্য ৪,৯৯৯ টাকা প্রদান করার অনুরোধ করে, এবং সেইসাথে হ্যাকাররা তাকে আশ্বস্ত করে একথাও জানায় যে, ওই টাকা তার অ্যাকাউন্ট থেকে কাটা হবে না। কিন্তু পেমেন্ট করার পরমূহুর্তেই ব্যাংকের একটি মেসেজ ঢোকে তার ফোনে, যেখানে তিনি দেখেন যে বিয়ারের দাম বাবদ তার অ্যাকাউন্ট থেকে দুটি ধাপে ৪৯৯ এবং ৪,৯৯৯ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় রীতিমতো হতচকিত হয়ে গিয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওই নম্বরে ফোন করে টাকা ফেরতের দাবি করেন। তখন জালিয়াতরা ওই আইনজীবীকে জানায় যে, এটা নিছকই ভুলবশত হয়ে গিয়েছে, এবং তাকে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দেয় হ্যাকাররা।

এর কয়েক মিনিট পর টাকা ফেরত দেওয়ার নাম করে ওই আইনজীবীকে আরও একবার কিউআর কোড স্ক্যান করার নির্দেশ দেয় দুর্বৃত্তরা। এতক্ষণেও ওই আইনজীবী আঁচ করতে পারেননি যে তিনি সাইবার জালিয়াতির ফাঁদে ফেঁসে গিয়েছেন, তাই হ্যাকারদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে গিয়ে তিনি আরও একবার কিউআর কোড স্ক্যান করেন, আর এর পরেই তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৪,৭৮২ টাকা গচ্ছা যায় বলে জানা গিয়েছে। এরপর ওই নম্বরে আর কোনো যোগাযোগও করা যায়নি। রিপোর্ট অনুযায়ী, নিজের কষ্টার্জিত অর্থ পুনরায় ফিরে পেতে আলোচ্য ঘটনাটির প্রসঙ্গে ওই আইনজীবী পুলিশের কাছে নিজের অভিযোগ দায়ের করেছেন, এবং এই জালিয়াতির মূল চক্রীকে হাতের মুঠোয় পেতে ইতিমধ্যেই সরেজমিনে তদন্ত করা শুরু করেছে মুম্বই পুলিশ।

সুরক্ষিত থাকতে হলে চোখকান খোলা রেখে চলতে হবে

এমনিতে সহজসরল সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে হ্যাকাররা যে দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের পকেট ভারী করে চলেছে, সেকথা তো আমাদের সকলেরই জানা। তবে এবার খোদ আইনের রক্ষাকর্তাই স্ক্যামারদের জটাজালে ফেঁসে যাওয়ায় আলোচ্য ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ইউজারমহলে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তাই যে-কোনো ধরনের অনলাইন অর্ডার করার সময় যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত আবশ্যক। খবরদার ভুল করেও কখনো অজানা ব্যক্তিদের দ্বারা প্রেরিত QR কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট করবেন না; অর্থ প্রদান করার জন্য সর্বদা অফিসিয়াল পেমেন্ট মাধ্যমগুলি ব্যবহার করুন। এছাড়া, অজানা কোনো সোর্স থেকে প্রাপ্ত লিঙ্কে ক্লিক করা থেকেও বিরত থাকতে হবে ইউজারদের। তদুপরি, WhatsApp সহ যাবতীয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার সময়ও চোখকান খোলা রাখা খুবই জরুরি। সবসময় মনে রাখবেন যে, চলতি সময়ে হ্যাকারদেরকে আটকানোর যেহেতু কোনো উপায় নেই, তাই সুরক্ষিত থাকতে চাইলে নিজেদেরকেই সচেতন থাকতে হবে। তাই হালফিলে স্ক্যামারদেরকে পরাস্ত করতে হলে সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন।