Vodafone Idea-এর ব্যর্থতা ভারতের প্রত্যেক মোবাইল ইউজারের খরচ বাড়াতে চলেছে, কেন জেনে নিন

দেশের টেলিকম মার্কেটে Vodafone Idea (Vi)-এর অবস্থার গ্রাফ বেশ কয়েক বছর ধরেই নিম্নমুখী; এর জেরে প্রায়শই কোম্পানির গ্রাহক হারানোর খবর পাওয়া যায়। কিন্তু চলতি বছরের জুন মাস এখনো পর্যন্ত Vi-এর জন্য সবচেয়ে খারাপ সময় বলে মনে হচ্ছে। Idea-র সাথে একীভূত হওয়ার পর ভারতের বৃহত্তম টেলিকম সংস্থার জায়গা থেকে Vodafone-Idea আজ ২৭০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী সমেত তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে। দিনের পর দিন নিজের পারফরম্যান্স উন্নত করার চেষ্টা চালালেও, সেই চেষ্টার কোনো সুফল না মেলায় সম্প্রতি ভয়ঙ্কর সংকটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে সংস্থাটি। টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (TRAI) সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুন মাসে Vodafone-Idea তার সর্বাধিক সংখ্যক গ্রাহক হারিয়েছে – ৪২,৮৯,৫১৯ জন।

ফলে Vi যেকোনো মুহূর্তে দেউলিয়া ঘোষণা করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে সংস্থাটির এই সিদ্ধান্ত যে টেলিকম মার্কেট তথা ইউজার বেসের ওপর চরম কুপ্রভাব ফেলবে তা আলাদা করে বলে দিতে হবে না। Vi-এর সাম্প্রতিক দুর্দশার দরুন ভয়েস এবং ডেটা উভয়ের জন্য ইউজারদের মোটা অঙ্কের বিল দেওয়ার দিন আসতে চলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। Vodafone-Idea-র এই ব্যর্থতা কেন ভারতের মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য এক চরম ‘খারাপ খবর’ হতে পারে তার মূল কারণগুলি আমরা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরবো।

Vodafone Idea থেকে Reliance Jio এবং Airtel-এ গ্রাহকদের হঠাৎ আগমন নেটওয়ার্কের ওপর বিশাল চাপ ফেলবে

ভোডাফোন আইডিয়া যদি দেউলিয়া ঘোষণা করে ব্যবসা বন্ধ করে, তাহলে টেলিকম জগতে আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কারণ গ্রাহকরা তড়িঘড়ি রিলায়েন্স জিও, এয়ারটেল বা বিএসএনএল/এমটিএনএল-এ মাইগ্রেট করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বেন। লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের আকস্মিক আগমন এই সংস্থাগুলির ওপর বিশাল চাপের সৃষ্টি করবে, যার ফলে সংস্থাগুলির পরিষেবার গুণমানও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হবে।

Vodafone Idea-এর পতন ভারতীয় টেলিকম মার্কেটকে ডুওপলির দিকে পরিচালিত করবে

ভোডাফোন আইডিয়ার পতন মানে ভারতের টেলিকম মার্কেটে ডুওপলি (এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে দুটি সংস্থা পণ্য বা পরিষেবার জন্য মার্কেটে আধিপত্য বিস্তার করে) পরিস্থিতি তৈরি হবে। কারণ ভোডাফোন চলে গেলে বাকি থাকে শুধুমাত্র Reliance Jio এবং Bharti Airtel। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা BSNL-MTNL থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করে চলা সংস্থা দুটি গ্রাহকদের কাছে প্রায় না থাকার মতোই হয়ে গেছে। অর্থাৎ Vi-এর পতনের অর্থ হল গোটা টেলিকম মার্কেটই Reliance Jio এবং Bharti Airtel-এর নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে যাওয়া। কিন্তু অর্থনীতি এবং ব্যবসায়িক আইন অনুযায়ী, ডুওপলি গ্রাহকদের জন্য কখনোই ভালো নয়, কারণ এর অর্থ লিমিটেড চয়েস এবং অপশন। এবং সর্বোপরি ভারতের এই বিপুল সংখ্যক ইউজারের জন্য ডুওপলি কখনোই ভাল বিকল্প নয়।

Vodafone Idea-এর পতন প্রযুক্তির অগ্রগতিকে বাধাপ্রাপ্ত করার পাশাপাশি পরিষেবার গুণমানকেও প্রভাবিত করবে

ভোডাফোন আইডিয়া-এর ‘মৃত্যু’-র অর্থ হল ভারতের টেলিকম পরিকাঠামো বজায় রাখার ব্যয়ভার তিনটির পরিবর্তে দুটি সংস্থা – Airtel এবং Jio-র কাঁধে গিয়ে পড়বে। এই দুটি সংস্থাকেই ভাগাভাগি করে ভারতের পুরো টেলিকম মার্কেট পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু অকস্মাৎ ভারতের বিপুল সংখ্যক জনগণের একাংশ এই দুটি কোম্পানির ওপর এসে পড়লে সংস্থাগুলিকে যথাযথ পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে এবং প্রযুক্তিগত গুণমানও উন্নত করতে হবে। কিন্তু আচমকা টেকনোলজি আপডেট করার জন্য পরিষেবা তথা বিনিয়োগের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

পরিষেবা প্রদানের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করার অর্থ মোবাইল ট্যারিফ বৃদ্ধি হতে পারে

সাম্প্রতিককালে করোনা পরিস্থিতির দরুন অন্যান্য যে কোনো সংস্থার মতোই টেলিকম সেক্টরগুলিও ইতিমধ্যেই বিপুল অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। গত কয়েক বছরে ARPUS বেশ খানিকটা নেমে এসেছে। ফলে হঠাৎ করে গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সেই পরিস্থিতি সামলাবার মতো অবস্থায় এখন আর সংস্থাগুলি নেই। তাই এই অবস্থায় ঠিকভাবে পরিষেবা প্রদান করার জন্য যেটুকু ব্যয় বৃদ্ধি হবে তা গ্রাহকদের মাধ্যমেই সংস্থাগুলি উসুল করবে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বলা বাহুল্য যে, মোবাইল প্ল্যানগুলির দাম বৃদ্ধি পাবে।

5G লঞ্চের সময়সীমা পিছিয়ে যেতে পারে

৫জি নেটওয়ার্ক চালু করার জন্য টেলিকম সংস্থাগুলির কাছ থেকে বড়ো রকমের অর্থের প্রয়োজন। তাই Vodafone Idea-এর ব্যর্থতায় এই বিপুল অর্থের পরিমাণ Reliance Jio এবং Airtel – দুই সংস্থার কাঁধে গিয়ে পড়বে। ফলে অকস্মাৎ এই অতিরিক্ত বোঝার ভারে সংস্থাগুলি ৫জি আপগ্রেডেশনের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের কথা চিন্তাভাবনা করে রেখেছিল, সেই পরিকল্পনায় বেশ খানিকটা প্রভাব পড়বে। ফলে ৫জি লঞ্চের সময়সীমাও পিছিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

2G গ্রাহকদের কিছুটা বেশি টাকা খরচা হতে পারে

Vodafone Idea-র প্রায় ১৪০-১৫০ মিলিয়ন গ্রাহক এখনো ২জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। ফলে টেলকোটি যদি তার আর্থিক দুর্দশার কাছে নতিস্বীকার করে, তবে এই ব্যবহারকারীরা প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রধান টেলিকম অপারেটরদের কাছে স্যুইচ করতে বাধ্য হবেন। এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি, Airtel ২ জি সার্ভিস প্রদান করলেও Reliance Jio কোনো ২ জি সার্ভিস অফার করে না। ফলে Vi-এর সমস্ত ২ জি গ্রাহক যদি Airtel-এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলে সংস্থাটির ওপর বিশাল চাপের সৃষ্টি হবে। আবার যারা Reliance Jio-তে স্যুইচ করবেন বলে মনে করছেন, তাদের রিচার্জের জন্য আরও বেশি টাকা খরচ করতে হবে অথবা অগত্যা একটা নতুন 4G ফোন কিনে ফেলতে হবে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন