রাজ্য পুলিশের 38,000 নম্বর Jio-তে পোর্টের সিদ্ধান্ত, BSNL-কে ভাতে মারার অভিযোগ কর্মী সংগঠনের

BSNL-এর ৩৮,০০০ টিরও বেশি সিম কার্ড Reliance Jio-তে পোর্ট করার সিদ্ধান্ত নিল কর্ণাটক রাজ্য পুলিশ

একটা সময়ে জমিয়ে ব্যবসা করার পাশাপাশি চুটিয়ে মুনাফা অর্জন করলেও বেসরকারি সংস্থাগুলির সৌজন্যে গত কয়েক বছর ধরে টেলিকম দুনিয়ায় সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি BSNL বা Bharat Sanchar Nigam Limited-এর আধিপত্য একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। গ্রাহক সংখ্যা ক্রমাগত কমতে থাকায় আর্থিক সঙ্কটে রীতিমতো জেরবার হয়ে গিয়েছে সংস্থাটি। উল্লেখ্য যে, এদেশে ইতিমধ্যেই বেসরকারি কোম্পানিগুলি 5G পরিষেবা রোলআউট করে ফেললেও BSNL এখনও ভারতে 4G সার্ভিসই নিয়ে আসতে পারেনি, যার ফলে প্রায়শই রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাটিকে ব্যঙ্গবিদ্রুপের মুখে পড়তে হয়৷ যদিও বাজারে টিকে থাকতে প্রতিনিয়তই প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে BSNL, কিন্তু কোনোভাবেই তারা বেসরকারি কোম্পানিগুলিকে টেক্কা দিতে পারছে না। ফলে ভালো পরিষেবা পাওয়ার জন্য প্রায়শই রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটির হাত ছেড়ে বেসরকারি টেলিকম অপারেটরদের হাত ধরতে বাধ্য হন প্রচুর সংখ্যক ইউজার। সেক্ষেত্রে সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী, এবারে এই তালিকায় শামিল হল কর্ণাটক রাজ্য পুলিশ।

BSNL-এর ৩৮,০০০ টিরও বেশি সিম কার্ড Reliance Jio-তে পোর্ট করার সিদ্ধান্ত নিল কর্ণাটক রাজ্য পুলিশ

সম্প্রতি কর্ণাটক রাজ্য পুলিশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তাদের দফতরের ৩৮,০০০ টিরও বেশি অফিসিয়াল মোবাইল ফোনের সিম কার্ড বিএসএনএল থেকে রিলায়েন্স জিও (Reliance Jio)-তে পোর্ট করা হবে। গত সোমবার অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল অফ কমিউনিকেশন, লজিস্টিকস অ্যান্ড মডারেশন কর্তৃক জারি করা এক সার্কুলারে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষের সকল বিভাগের প্রধানদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, সিম পোর্ট করার কাজটি ধাপে ধাপে সংঘটিত হবে। উল্লেখ্য যে, মোট ৩৮,৩৪৭ টি সিম পোর্ট করা হবে বলে খবর মিলেছে।

কিন্তু ঠিক কী কারণে আচমকা এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? এর জবাবে কর্ণাটক রাজ্য পুলিশের এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন যে, মূলত ভালো সার্ভিস পাওয়ার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আসলে পুলিশের মতো জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে ফোনে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের উপস্থিতি একান্ত আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, উক্ত ৩৮,৩৪৭ টি কানেকশনের মধ্যে বেশিরভাগই প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে রয়েছে, যেখানে প্রায়শই কর্মকর্তারা ভালো নেটওয়ার্ক কভারেজের অভাবের বিষয়ে অভিযোগ করেন। প্রসঙ্গত, আজকাল একাধিক জরুরি কাজের জন্য পুলিশকে হরদম বিভিন্ন লোকেশন, ফটো, ভিডিও সহ নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ ডেটা মোবাইল ফোন মারফত শেয়ার করতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, বিএসএনএল এখনও পর্যন্ত ৪জি পরিষেবাই এদেশে নিয়ে আসতে পারেনি, যেখানে বেসরকারি সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই ৫জি রোলআউট করে ফেলেছে। তাই পুলিশের মতো জরুরি পেশার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য বিএসএনএল একেবারেই সুযোগ্য নয়। ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন যে, কর্ণাটক ট্রান্সপারেন্সি ইন পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৯৯ অনুযায়ী বাণিজ্যিক মূল্যায়নের পর বিকল্প পরিষেবা সরবরাহকারী হিসেবে রিলায়েন্স জিও-কে বেছে নেওয়া হয়েছে। 

কর্ণাটক রাজ্য পুলিশের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিল বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন

খুব স্বাভাবিকভাবেই কর্ণাটক রাজ্য পুলিশের এই সিদ্ধান্তের জেরে বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (BSNL Employees’ Union) মনে চূড়ান্ত ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। তাদের মতে, বিএসএনএলের খাতের প্রাপ্য টাকা রিলায়েন্স জিও-কে দিয়ে বেসরকারি টেলিকম সেক্টরকে উন্নীত করতে চাইছে কর্ণাটক পুলিশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কর্ণাটক পুলিশই প্রথম নয় যারা সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিটির হাত ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে। বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গুন্ডান্না সি কে (Gundanna C.K.) জানিয়েছেন, এর আগে ভারতীয় রেলওয়ে এবং তেলেঙ্গানা পুলিশ সহ কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক বিভাগ রিলায়েন্স জিও-র শরণাপন্ন হয়েছে। এবার অবশেষে কর্ণাটক পুলিশও সেই পথে হাঁটলো।

গুন্ডান্না আরও অভিযোগ করেছেন যে, একের পর এক সরকারি সংস্থা যদি বিএসএনএলের হাত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে থাকে, তাহলে টেলিকম দুনিয়ায় কামব্যাক করা রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন কোম্পানিটির পক্ষে কোনোমতেই সম্ভব হবে না। অন্যদিকে, বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলি ক্রমশই ফুলেফেঁপে উঠতে থাকবে। তার কথায়, সরকার সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী অবসর প্রকল্প চালু করেছে, যার অধীনে প্রায় ৮০,০০০ কর্মচারী অবসর গ্রহণ করেছেন। এর সুবাদে কার্যত কর্মীহীন হয়ে পড়েছে বিএসএনএল, যা সংস্থার ব্যবসায়িক উন্নতির জন্য মোটেই সুখকর নয়। তিনি একথাও বলেছেন যে, একদিকে কেন্দ্র যেখানে জোরদার ৫জি স্পেকট্রামের নিলামের আয়োজন করে বেসরকারি কোম্পানিগুলিকে ৫জি পরিষেবা নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে, সেখানে বিএসএনএলের ৪জি রোলআউটের জন্য কেন্দ্রের তরফ থেকে বিশেষ কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই বিএসএনএলকে বেসরকারি সংস্থাগুলির তুলনায় খাটো করে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন গুন্ডান্না।