গায়ের রঙ কালো হওয়ায় ঠাট্টা-মজা, ইনস্টাগ্রামে বর্ণবিদ্বেষ ছড়ানোয় অভিযুক্ত বহু ভারতীয়

অ্যাপ্লিকেশনের ফিচারে নতুন ফিল্টার সংযোজন করে রীতিমতো বিপাকে ইনস্টাগ্রাম (Instagram)। বহুল প্রচলিত এই সামাজিক মাধ্যমের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত বর্ণবিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ উঠলো! ঠিকই পড়ছেন, নিজেদের বেশ কিছু ইনফ্লুয়েন্সরের দৌলতে আজ ইনস্টাগ্রামকে এই বদনাম কুড়োতে হচ্ছে। যদিও এর সূত্রপাত লুকিয়ে আছে অ্যাপ্লিকেশনের নয়া ফিচারেই।

Instagram এর BlackFace ফিচারকে ঘিরে বিতর্ক

সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে ব্ল্যাকফেস (BlackFace) নামক একটি নতুন ফিল্টার যুক্ত হয়। দেখা যায় ফিল্টারটি ব্যবহারকারীদের চেহারার স্বাভাবিক বর্ণকে কালো বা গাঢ় ধূসর রঙে পরিবর্তিত করতে সক্ষম। ঠিক কোন উদ্দেশ্যে অ্যাপ্লিকেশন নির্মাতারা এইধরনের ফিল্টার সংযোজন করলেন, প্রাথমিকভাবে সেসব কিছুই জানার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু ইনস্টাগ্রামের বিশেষ কিছু ইনফ্লুয়েন্সরের সৌজন্যে অতি দ্রুত নয়া পরিবর্তনটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

ব্ল্যাকফেস ফিল্টার ব্যবহার করে বহু ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীকেই তাদের চেহারার রঙ বদলে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ‘রিল’ ভিডিও তৈরী করতে দেখা যায়। এত দূর পর্যন্ত ঠিক ছিলো। কিন্তু ভিডিও অগ্রসর হতেই দেখা যায়, নিজেদের বর্ণ পরিবর্তনের মাধ্যমে ইনস্টা ইউজারেরা কোনো সদর্থক বার্তা দিতে ইচ্ছুক নন। বরং এর মাধ্যমে তারা কখনো জেনেশুনে, কখনো নিজের অজান্তেই অপেক্ষাকৃত কৃষ্ণবর্ণের মানুষদের অপমান করতে উৎসাহী। শুধুমাত্র এই কারণে অচিরেই ইনস্টাগ্রামের নতুন ফিল্টার বিকল্পটিকে নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়।

আসলে আপত্তিজনক বিষয়বস্তু কেন্দ্রিক ভিডিও তৈরীর কারণেই উক্ত বর্ণবিদ্বেষমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বেশীরভাগ ভিডিও’র শুরুতেই ইনফ্লুয়েন্সরেরা নিজেদের কালো গাত্র-বর্ণের জন্য হতাশাব্যাঞ্জক অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে থাকে। কিন্তু ভিডিও এগোতেই অন্য এফেক্টের সাহায্যে তাদের চামড়ার রঙ্ বদলে যায় এবং এই পরিবর্তনে তাদের দৃষ্টিকটু রকমের খুশি হয়ে উঠতে দেখা যায়!

আবার অনেকেই ভিডিওতে নিজের মুখের কালো রঙ ঘষে ঘষে তোলার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে রীতিমতো দুঃখ প্রকাশ করতে থাকে। নিজের কালো রঙ‌কে বিদ্রুপ করে একটি মেয়ের আক্ষেপ সম্বলিত ভিডিও প্রায় ২.২ মিলিয়ন ভিউয়ারের কাছে পৌঁছে যায়! এরপরেই ইনস্টাগ্রামের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ এনে অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে নেটিজেনদের বিক্ষোভ প্রকাশ্যে আসতে থাকে।

ব্ল্যাকফেস ফিল্টার সংযোজনের জন্য বহু টুইটার ব্যবহারকারী Instagram কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করেন। এছাড়া একুশ শতকে দাঁড়িয়ে যারা এখনো গায়ের রঙ কালো হওয়ার জন্য বিরক্তি প্রকাশ করেন তাদের মানসিকতারও যে আমূল পরিবর্তন দরকার, বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে সেই বিষয়টিও উঠে এসেছে।

নেটাগরিকদের সম্মিলিত বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়ে পিছিয়ে আসে Instagram। কোনো এক ফাঁকে তারা অ্যাপ থেকে ব্ল্যাকফেস ফিল্টারটি তুলে নেয়। যদিও ততক্ষণে প্রায় কুড়ি হাজার বর্ণবিদ্বেষী ভিডিও সামাজিক মাধ্যমটিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

গায়ের রঙের জন্য কাউকে বিদ্রুপ করা আক্ষরিক অর্থেই মধ্যযুগীয় মানসিকতার নামান্তর। সবথেকে বড় দুঃখের কথা যাদের বিরুদ্ধে এই বর্ণবিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাদের অধিকাংশতই ভারতীয় নাগরিক!

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন