Sri Lanka: সরকারের তেল কেনার টাকা নেই, গ্যারাজে গাড়ির উপর ধুলো জমছে, সাইকেলই এখন ভরসা শ্রীলঙ্কাবাসীর

বিগত দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে ‘দ্বীপরাষ্ট্র’ শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক ও খাদ্য সঙ্কট তলানিতে এসে ঠেকেছে। তদুপরি জ্বালানির আকাল প্রতি মুহূর্তে গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে সর্বদা জানান দিয়ে চলেছে নাগরিকদের। আকালের ভয়াবহতা এতটাই যে লাখে লাখে শ্রীলঙ্কাবাসী রাস্তায় নেমে বিদ্রোহ দেখাচ্ছেন। স্বভাবতই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কার প্রতিটি বড় রাস্তা থেকে অলিগলি। আমজনতাকে এক ফোঁটা পেট্রোল বা ডিজেলের জন্য মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন। পরিশেষে মিলছে যৎসামান্য পরিমাণ জ্বালানি। এহেন পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের কাছে তাই যুগ যুগ ধরে নিখরচায় পথচলার অতিপ্রিয় সঙ্গী দু’চাকার প্যাডেল ঠেলা সাইকেলই হয়ে উঠেছে ‘অন্ধজনের আলোর দিশা’।

ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও জ্বালানি ও অন্যান্য সঙ্কট মিটছে না। ফলে দূর দূরান্ত থেকে নিত্যদিনের চলাফেরার জন্য সেদেশের মানুষ বেছে নিয়েছেন দ্বিচক্রী সাইকেল। এতে করেই অফিস কাছারি থেকে বাজার হাঁট সারছেন আম আদমি। ১৯৪৮ সালের পর এই প্রথম সেদেশে অর্থনৈতিক, জ্বালানি ও খাদ্য সঙ্কটের এহেন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রেশন ব্যবস্থার মতো নগরবাসীদের জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। জ্বালানি পেতে হলে আগে টোকেন সংগ্রহ করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। লাইনে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা এমনকি মাঝেমধ্যে দিন অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে ‘হকের’ তেলটুকু পেতে। সর্বসাধারণকে টোকেন ও তেল সরবরাহের কাজে পাম্পের কর্মীদের সহযোগিতা করছে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী। এক সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল দেওয়া হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে থুসিথা কাহাদুবা নামক ৪১ বছর বয়সী স্থানীয় এক চিকিৎসক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “প্রথম প্রথম দুই থেকে তিন ঘন্টা লাইনে দাঁড়ালেই পেট্রোল পাওয়া যেত। কিন্তু সপ্তাহ তিনেক আগে আমি একটানা তিন দিন পেট্রোলের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।” অবশেষে বাধ্য হয়ে তিনি একটি বাইসাইকেল কেনেন।

আসলে সরকারি বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার কার্যত নিঃশেষ হওয়ায় ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’র দশা হয়েছে শ্রীলঙ্কা প্রশাসনের। ফলে ২.২ কোটি দেশবাসীর জন্য সার, খাদ্য এবং ওষুধের আমদানিতে শ্লথগতি প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। একই সাথে গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশের একটি বন্দরেও জ্বালানি বোঝাই কোনো জাহাজ এসে পৌঁছায়নি। অন্যদিকে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ টু-হুইলারের হেলমেট, লক ইত্যাদির সরবরাহতেও ধীর গতি এসেছে। ভিক্টর পেরেরা নামক একজন বাইসাইকেল দোকানের মালিক রাইটার্সকে বলেন, “গত মে মাস থেকে সাইকেলের বিক্রি ১০ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ পেট্রোলের সমস্যা।” যদিও মালিকদের কাছে সাইকেলের সম্ভারও সীমিত। কারণ সরকার বিদেশী মুদ্রা সংগ্রহের জন্য মৌলিক সামগ্রীর বাইরের জিনিস আমদানি, সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছে।